চায়নার ডায়েরী-২
সাংহাই
২৯/৮/২০০৭ইং
সকালে ঘুম থেকে জেগে নামাজ পড়ে রুমের ইলেক্ট্রিক কেটলিতে চা করি-যা হোটেল থেকে সরবরাহ করা হয়। ফ্রিজে ফ্রুটস,
চকোলেট বার আছে। চায়ের সাথে ঢাকা থেকে নেয়া বিস্কুট, কেক খেয়ে নেই। এরা হোটেলে
কোনো পানির বোতল দেয়না। তবে বিয়ারের বোতল দিতে ভুল করেনা। এখানে এক বোতল বিয়ারের
দাম ২ আরএমবি (১
আরএমবি বাংলাদেশী ৮ টাকার
সমান), কিন্তু এক লিটার পানির বোতলের দাম ৮ আরএমবি। আমি আগের রাতে ইলেক্ট্রিক
কেটলিতে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সাথে নেয়া বোতলে রেখে দেই। সাইফুদ্দিনকেও ঐ বিষয়
শিখিয়ে দিয়েছিলাম এবং ঘুম থেকে জেগেই সাইফুদ্দিনকেও চা বানিয়ে এবং সাথে করে নিয়ে আসা বিস্কুট খেয়ে রেডি হতে বললাম।
চায়নাতে নাস্তা করা বিরাট এক মছিবত। স্পন্সর
কোম্পানীও কখোনো নাস্তা করতে বলেনা। তাছারা হোটেল থেকে যে কমপ্লিমেন্টারী ইংলিশ/
চায়নীচ/ কন্টিনেন্টাল ব্রেকফাস্ট দেয় তার রেসিপিও ওদের চয়েস। ওরা নাস্তায় যা খায়-তা পৃথিবীর
অন্য কোন মানুষ খেতে পারবেনা। টমি আর জিমী দুইজন হোটেলের নাস্তাই খেলো। আমরা যারা
রেগুলার চায়নাতে আসি-তারা সব সময় বিস্কুট/ চানাচুর জাতীয় কিছু খাবার
সাথে নিয়ে যাই শুধু সকালের নাস্তার জন্য।
ঠিক নয়টায় রুমের ফোন বেজে ওঠে। মিস জয়েস কল করে
জানালো-সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে হোটেল
লবিতে। আমরাও রেডি ছিলাম। হোটেল লবীতে পৌছানোর পর জয়েস আমাদের “নি
জাও”(শুভ সকাল) বলে মাথা বো করলো। কোন অসুবিধা হলো কিনা সৌজন্যমুলক
জানতে চাইলেন। আমাদেরকে সংগ দেবার জন্য অফিস থেকে আরো একজন অফিসার এসেছেন যার নাম
টম ডিং। পরিচয় পর্বে সাইফুদ্দিন তার নাম বলার সাথে সাথে সোতসাহে টম ডিং বলে ঊঠলেন-“
হাউ নাইস! ইউ আর সাইফুডিং, আইএম টম ডিং”! “ঊই
আর বোথ অব ডিং, সো ঊই আর ফ্রেন্ড”!! তারপর
টম ডিং অনেক্ষন ধরে সাইফুডিং এর হাত ঝাকালো.........। চায়নাতে সবাই সাইফুদ্দিন কে “সাইফুডিং”
ঊচ্চারণ করে।
আমরা চলছি সাংহাই ল্যাটেস্ক
ফ্যাক্টরিতে। মিস জয়েস আমাদের বহনকারী মাইক্রোবাস ড্রাইভ করছেন। আমি তার পাশের সীটে। টমী-জিমীর পিছনের সীটে তার ‘ফ্রেন্ড’
টম ডিং এর সাথে। আমিও
এখন থেকে সাইফুদ্দিন’কে
“সাইফুডিং” ডাকি। চমতকার ঝক ঝকে সুন্দর একটা ২৬০০
সিসি মার্সিডিস বেঞ্জ স্টীম ব্রান্ড লাল রঙ মাইক্রোবাসে। চায়নাদের লাল রঙ প্রীতি আছে! জয়েস পড়েছে
টাইট লাইট ব্লু জিন্স এবং লাল রংয়ের স্লীভলেস টি-শার্ট। ডানা কাটা পরীর মত সুন্দর
লাগছে ওকে। সাংহাইতে কোন ১৫০০ সিসির
ছোট গাড়ী নেই। এখানকার নিয়ম ৫
বছরের বেশী কোন পুরোণো গাড়ী এবং ১৫০০ সিসি’র ছোট গাড়ী সাংহাই মেট্রোপলিটান সিটিতে
চলাচল করতে পারবেনা।
আমরা চলছি ওদের
ফ্যাক্টরীতে। যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। সাংহাই চায়নার ৩য় বড় প্রভিন্স-যার মোট আয়তন
৪২৩০০ বর্গ মাইল-বাংলাদেশের ৩ ভাগের ২ ভাগ। ৬,৩৪৫ বর্গ মাইল
শুধু সাংহাই সিটির আয়তন। পুরো সাংহাইকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সাংহাই সেন্ট্রাল, নর্থ, সাঊথ, ইস্ট, ওয়েস্ট-এগুলোর আলাদা আলাদা নাম আছে। খুব
পরিচ্ছন্ন মেঘাসিটি। ঝকঝকে, তকতকে বিশাল চওড়া রোড। ৩ তলা, ৪ তলা ফ্লাইওভার। মাটির
নীচে সাবওয়ে/ মেট্রো রেল। খুব সুন্দর আবহাওয়া। বেইজিং এর মতো পরিবেশ দুষন নেই। খুব
কঠোর নিয়ম শৃংখলা। আমরা ঢাকার বাসিন্দারা
বলতে গেলে যেমন ঢাকার অলি-গলি সব চিনি। সাংহাই এর অবস্থা এর ঠিক বিপরীত। এখানকার ট্রাফিক বিভাগ, কিম্বা
গোয়েন্দা বিভাগও মনে
হয়না সাংহাই সিটির ১০০ ভাগের ১০
ভাগের বেশী চিনবে!
জয়েসের সাথে আমার
ব্যাক্তিগত বিভিন্ন আলাপ হচ্ছে। চীনাদের কোন ভাই বোন নেই। অর্থাৎ সব চীনাদের একটি মাত্র সন্তান। আমাদের
দেশে সব পরিবারে অনেকজন ভাই বোন হয়, এমন কি আমার অনেকজন ভাই বোন আছে জেনে জয়েস টাস্কি মেরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো! পরে বললো-“আমি
জেনেছি তোমাদের দেশটা খুব গরীব, ল্যন্ড এরিয়া বিপদ জনক ভাবে কম, রেসিডেন্সিয়াল
প্রব্লেম খুব বেশী। প্রতি বর্গ মাইলে জনবসতি ১৪০০ জনের বেশী-তাহলে
তোমরা এত বেশী বেশী সন্তান নিচ্ছ কেনো”? আমি মজা করে বললাম-“বার্থ
কন্ট্রোল করার জন্যইতো তোমার কোম্পানী থেকে আমরা ২৮৩ মিলিয়ন পিস কন্ডম কিনতে
যাচ্ছি”! জয়েস খেদোক্তি করে বললো-“তোমরা
অনেক লেট করে ফেলেছো, অনেক ভুল
করেছো, জানিনা কি করে তোমরা সার্ভাইব করবে”!
জয়েসের বয়স ২৬। বয়সের চাইতে
সে চিন্তা চেতনায় অনেক বেশী পরিপক্ক। আমাদের দেশী মেয়েদের মত বয়স গোপন করার স্বভাব
নেই অন্য কোন জাতির।। এখনো বিয়ে করেনি। চায়না থেকে হায়ার সেকেন্ডারী
পাশ করে লন্ডন থেকে ইংলিশ এবং
সেক্রেটারিয়েলের ঊপর এক বছরের একটা কোর্স করেছে। এই কোম্পানীতে
৫ বছর জব করছে। তিন বছর যাবত এক ফ্রেন্ডের সাথে লিভটুগেদার করছে। ফ্রেন্ড লী হোটেল/ রেস্টুরেন্টের ব্যান্ড সিঙ্গার। “ফ্রেন্ডের
উগ্র রাগের স্বভাব আছে”-তাই এখোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা তাকেই
বিয়ে করা হবে কিনা!
চায়নাতে ভালো বর পাওয়া খুব মুশকিল।তবে আশা করছে ২০১০ সাল নাগাদ বিয়ে করবেই। আমি
আগাম তার বিয়ের জন্য ঊইস করলাম এবং দাওয়াত নিয়ে নিলাম.........।
আমরা পৌছে গেছি সাংহাই
ল্যাটেক্স ফ্যাক্টরী। সাংহাই ল্যাটেক্স ফ্যাক্টরী চায়না-জার্মান জয়েন্ট ভেঞ্চার
কোম্পানী।এই ফ্যাক্টরী
শুধু চায়নাতেই নয় পৃথিবীর অন্যতম বড় একটা কন্ডম, সার্জিক্যাল গ্লাভস এবং অন্যান্য
ল্যাটেক্স জাতীয় প্রডাক্ট ম্যানুফ্যাচারিং ফ্যাক্টরী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এদের প্রডাক্ট রপ্তানী হয়। গত
৫ বছর যাবত আমি এই কোম্পানী থেকে এদের বিভিন্ন প্রডাক্ট ইম্পোর্ট করি। ইঊএনএফপিএ’র
আর্থীক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে আমার কোম্পানীর মাধ্যমে এই কোম্পানীর সাথে
২৮৩ মিলিয়ন পিস কন্ডম ইম্পোর্ট
করার একটা এগ্রীমেন্ট হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন