বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

চায়নার ডায়েরী-৬



চায়নার ডায়েরী-৬
সাংহাই-নানজিং
৩১/৮/২০০৭ইং 

সকাল সারে নয়টার সময়ও সাইফুডিং এর রুমে গিয়ে দেখি সে অঘোরে ঘুমোচ্ছে! আন্দাজ করলাম-ওর ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভাঙ্গবেনা। তাকে ঘুম থেকে জাগালামনা। চায়না ল্যাটেস্ক ফ্যাক্টরীর সাথে আমাদের কাজ শেষ। তারপরও আমার জন্য ড্রাইভার সহ গাড়ী রেখে গিয়েছে জয়েস। আমি আজ সাংহাই থাকছি আমার অন্যান্য ব্যাবসায়ীক কাজে। সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গাড়ী নিয়ে টমি-জিমী ঘুষের টাকায় শপিং করেছে অনেক। যেখানে যা কিছু পেয়েছে-তাই কিনেছে ......... পুতেরা। তাদের হোটেল বিল পরিশোধ করতে গিয়ে দেখি-৩ রাতে ক্যাবল টিভির বিল এসেছে ৩৮০ আরএমবি! আমার ধারনা-তারা টিভি দেখেনি কিন্তু পে-চ্যানেল অন করে ঘুমিয়েছে আমার খরচা বাড়ানোর জন্য। তারা প্রতি রাতেই মাসাসী নিয়েছিল একাধীক।মাসাসীদের বিল দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ! আমি হিসাব মেলাতে পারছিনা-কি করে একটা ডাবল বেড রুমে দুইটা পঞ্চাশোর্ধ বয়স্ক লোক মাসাসী নিয়েছিলো! রুমে যত প্রকার খাবার জমা থাকে(কিনে খাবার/নেয়ার জন্য)সব খাবার ছাড়াও- আন্ডার ওয়ার, মোজা, রাতে পড়ার জন্য শর্টস, এক্ট্রা প্রসাধনী, টাই, সুইমিং কস্টিউমস সব সুটকেস ভরে নিয়ে গিয়েছে! যার জন্য আমাকে এক্ট্রা পে করতে হয়েছে আরো ১৮ শত আরএমবি(অথচ এগুলো বাহিরের দোকানে ৩০০ আরএমবির বেশী দাম হবেনা)।

আমি একাকী বেড়িয়ে পরি-আমার অন্যান্য ব্যাবসায়ীক কাজগুলো শেষ করার জন্য। কাজ শেষ করে কেএফসি থেকে আমি লাঞ্চ করে আসি এবং সাইফুদ্দিনের জন্য লাঞ্চ প্যাকেট নিয়ে হোটেল রুমে ফিরি। সাইফুডিং আমাকে দেখে লজ্জায় আমার চোখের দিকে তাকায়না!আমি সাইফুদ্দিনকে স্বাভাবিক করতে এমন একটা ভাব করলাম যেনো কিছুই হয়নি!

আমরা এসেছি সাইট সিইংয়ে.........। এক সময় হোয়াং হো নদী ছিল চায়নার দুঃখ। নদীর দুই তীর বাধাই করে দুই তীরে নানান সুদৃশ্য স্থাপনা গড়ে করা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। এখোন সেই হোয়াং হো নদী সাংহাই সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম বড় রেভিন্যূ কালেকশন খাত। হোয়াং হো নদী সাংহাইর সব চাইতে সুন্দর দর্শনীয় স্থান। এর অপর পাড়েই সাংহাই টিভি টাওয়ার(ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ার), এই টিভি টাওয়ার এশিয়ার সব চাইতে ঊচু এবং পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম ঊচু টাওয়ার। এখানে আরো আছে সাংহাই ফরেন ইনভেস্টমেন্ট কম্পলেক্স। নতুন তিন জনের সৌজন্যে বিকেল বেলায় আমরা ঘুড়তে গেলাম সেখানে। অপুর্ব সুন্দর যায়গা। লক্ষ লক্ষ দেশী বিদেশী পর্যটকের ভীর! না দেখলে কল্পনাও করা যায়না কত পর্যটকের ভীর হতে পারে! নদীর বুক জুড়ে হাজারো আলোক সজ্জিত বিলাসবহুল যান্ত্রীক ক্রুইজ শীপ/বোট। সেই সব নৌকা, জাহাজে আছে ক্যাসিনো, বার সহ আরো অনেক কিছু। ওগুলোতে না চড়লে কল্পনাই করা যাবেনা-আমোদ ফুর্তি করার জন্য, খরচ করার জন্য সেখানে কি নেই! রাত যতই বাড়ে ঊতসবের জৌলুস ততই বাড়ে! আমরা অনেক ছবি তুললাম। আজ আমরা আমাদের ইচ্ছে মত কেএফসি তে ডিনার করি। আমার প্রিয় খাবার চিকেন ঊইংস সহ অন্যান্য খাবার খেয়ে পেট ভরি। ডিনার করে রুমে ফিরি।

টমী-জিমীদেরকে নিয়ে একসাথে এয়ারপোর্ট পৌছলাম ৭ টার সময়-ওরা আজ দেশে ফিরে যাবেমি ড্রাইভারকে ১০০০ আর এম বি বখশিশ দিতে চেস্টা করলাম-কিন্তু কোন ভাবেই ড্রাইভার পেং বখশিশ নিলোনা! আমি ফ্রান্সে দেখেছি সকল সার্ভিস মেনরা জোড় করে বখশিশ নেয়! কম দিলে খারাপ ব্যাবহার করে!  টমি-জিমীদের কুনমিং পৌছতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘন্টা। আমাদের নানজিং পৌছতে সময় লাগবে এক ঘন্টা প্লাস। তারা আজ রাতে কুনমিং থাকবে। কারন ঢাকা যাবার একটি মাত্র ফ্লাইট প্রতি দিন সকাল ১০ টায়। আমি আগেই কুনমিং তাদের ট্রান্সপোর্ট, থাকার-খাওয়ার ব্যাবস্থা করে রেখেছি। ওনারা কুনমিং পৌছেলেই আমাদের বাংলাদেশী লোক এসে তাদের নিয়ে যাবে বাংলাদেশী গেস্ট হাঊজে। আবার পর দিন সকালে এয়ারপোর্ট পৌছে দিবে টাইম মত। ওরা যাতে কুনমিং বেশী দিন থেকে আমার খরচা বাডাতে না পারে সেই জন্য আমি আগেই ওদের রিটার্ন টিকেট রি-কনফার্ম করে দিয়েছি।

আমরা সঠিক সময় নানজিং পৌছি। নানজিং আমার অত্যন্ত পরিচিত সিটি। ১৫ বছর যাবত নানজিং এর সাথে আমার বিজনেস রিলেশন। আয়তনে নানজিং আমাদের ঢাকা সিটির চাইতে অনেক বেশী বড়। নানজিং চায়নার অনেক ঐতিয্যবাহী সিটি। অনেক ঐতিহাসিক যায়গা আছে এখানে। এটা চায়নার একটা ইন্ডাস্ট্রীয়াল সিটি। এয়ারপোর্টে আমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে আমার বিজিনেস প্রিন্সিপাল রিচার্ড ওয়াং অপেক্ষায় ছিল। রিচার্ড আমার খুব ভাল বন্ধু। আমাদের ঊভয় পরিবার খুব ঘনিষ্ঠ আমরা এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের জন্য নির্ধারিত নিঊ সেঞ্চুরী হোটেলে গিয়ে ঊঠি। এটা ফোর স্টার হোটেল। এই হোটেলে আমি আগেও অনেক বার থেকেছি। রিচার্ডের অনেক বড় কোম্পানী। সব সময় দেশী/বিদেশী বায়ার আসে। যারা সবাই এই হোটেলেই থাকে। রিচার্ডের কোম্পানী এই হোটেলের কর্পোরেট ক্লায়েন্ট। এখান থেকে রিচার্ড ওয়াংর অফিস মাত্র ২৫ মিনিটের ড্রাইভ টাইম। রিচার্ড ওয়াং এবং তার অফিসের সবাই সাইফুদ্দিনকে যথা রিতী চাইনিজ ঊচ্চারনে সাইফুডিং বললো। আমার রুম থেকে সাইফুডিং এর রুম অন্য ব্লকে।
আমরা তিন জন হোটেলের ডাইনিং এ বসে অনেক্ষন গল্প করতে করতে খাবার খেয়ে নিলাম। মাসরুম স্যুপ, ন্যুডুলস এবং ব্লু টুনা ফিসের একটা ডিস অর্ডার দেয়া হলো। ব্লু টুনা ফিস সারা দুনিয়া জুড়েই খুব কস্টলি! এখানে আমার খাবার নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। কারন রিচার্ড জানে আমি কি খাবো, কি খাবোনা।

রাত এগারোটা পয়তাল্লিশ মিনিটে কুনমিং ফোন করে কনফার্ম হলাম টমী-জিমী ঠিক মত পৌছেছে। যথা রিতি আমার লোকেরা ওনাদের নিতে এয়ারপোর্টে হাজির আছে। রিচার্ড চলে গেলো।
নাঞ্জিং আমার কাছে অনেকটাই নিজ বাড়িরমত নাহলেও ঢাকারমত! আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন