চায়নার ডায়েরী-৭
নানজিং
০১/৯/২০০৭ইং
নানজিং চায়নার ঐতিয্যবাহী ঐতিহাসিক সিটি। জিয়াংসু প্রভিন্সের ক্যাপিটাল সিটি নানজিং।
জিয়াংসুর আয়তন ১০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এবং নানজিং সিটির আয়তন ৬,৬১৫ বর্গ
কিলোমিটার। চায়নিজ ইতিহাসবেত্তা, জাতীয়তাবাদি নেতা Dr. San
Yat-Sen এর জন্ম ভুমি এই নানজিং। চিয়াং কাই সেক (প্রাক্তন তাইওয়ানের
প্রেসিডেন্ট, লং মার্চের সময়
চায়না থেকে বিতারিত) হলেন সান
ইয়াত সেনের ভাব শিশ্য। এই ইতিহাসবেত্তা ভারতীয় ঊপমাহাদেশ এমনকি আমাদের এই ঢাকা শহর
পর্যন্ত ভ্রমন করেছেন ১৯০২-১৯০৬ সাল পর্যন্ত-যা আমরা ইতিহাসে পড়েছি।
চায়নিজনরা তাঁকে খুব সম্মানের চোখে দেখে। আমি তার জন্মস্থান বেশ কয়েক বছর পুর্বে
গিয়েছিলাম দেখার জন্য।
নানজিং এলে আমার অনেক সুবিধা।
রিচার্ড ওয়াং আমাকে তার যেকোন একটা গাড়ী দিয়ে দেয় ড্রাইভার ছারা। আমি নিজেই ড্রাইভ
করি এখানে। আমার ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নানজিং মেট্রোপলিটান সিটিতে
এন্ড্রোস করানো আছে। তাই আমি এখানে ড্রাইভ করতে পারি। নানজিং অনেক মুসলমানের বাস। এরা কিছুটা কট্টরপন্থী। এখানকার
চায়নিজদের খুব বাজে ধারনা মুসলমানদের ঊপড়।সব চায়নিজরাই মনে করে বেশীর ভাগ মুসলমানরা
সন্ত্রাসী-যা চায়নিজ সরকারও মনে করে।এখানকার মুসলমানেরা সব দিক থেকেই খুব পিছিয়ে। সরকারী নির্যাতনে তাদের অস্তিত্বই হুমকীর মুখে।ওল্ড
নানজিং এ অনেক মুললিম ছোট ছোট খাবার হোটেল ব্যাবসার সাথে জড়িত। আমি সেই সব হোটেলে
প্রতিবারি খেতে যাই। ওদের রান্নার সাথে আমাদের দেশের রান্নার অদ্ভুত একটা মিল আছে।
আমি কখোন শুক্র বার নানজিং থাকলে ঐ
এলাকায় জুম্মা নামাজ আদায় করি। যদিও ওদের নামাজের সাথে আমাদের নামাজের অনেক মিল নেই। ভাষাগত কারনে অমিলগুলোর কারন বের করতে পারিনি।
পাঠক বৃন্ধ, চায়নায় আমার একটি
মসজিদ দেখার কাহিনী আপনাদের শোনাবার লোভ সামলাতে পারছিনা। ১৯৮৫/৮৬ সালে
আমি একটা শিপিং কোম্পানীতে জব করতাম। অফিসিয়াল কাজে আমাকে বেইজিং যেতে হয়। আমি অফিসিয়াল কাজ শেষ করে গ্রেটওয়াল দেখে
ফিরেছি। গাইড জানালো এখানে একটা “মুসলমাদের
মসজিদ” আছে-আমারা
ইচ্ছে করলে একই প্যাকেজের আওতায় দেখতে যেতে পারি। আমি দেখার জন্য ঊতসাহি হলাম।অনেক
পুরোনো আমলের একটা মসজিদে (পুরোনো দালান, নাম মসজিদ)নিয়ে যাওয়া হলো। টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে থাকা স্যুট-টাই-সু, মাথায় টুপী পরা ইমাম সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে
দেয়া হলো। তার মুখে হাতে বানানো মোটা চায়নীজ চুরুট। অন্য হাতে মদের গ্লাস! ইমাম সাহেব
কমুনিস্ট পার্টির একজন
কর্মকর্তা। এই মসজিদের “ইমাম” হলো তার সরকারী জব। তার একজন লেডী সেক্রেটারী আছে। তিনি বসেন যেখানটায় নরমালি মসজিদের ইমাম সাহেব বসেন-সেইখানে। তার
পাশে অনেক বই পুস্তক-যা সব মার্ক্সবাদ-লেলিনবাদের ঊপর লাল বই! আমি ইমাম সাহেবকে সালাম দিলাম। ঊনি মাথাটা বো করে বললেন “নি হাও”!আমি তার কাছে কিছু জানতে চাইলাম। তখন সে তার লেডী সেক্রেটারীকে
ডেকে আনলেন আমার প্রশ্নের
জবাব দিতে। এলেন লেডি সেক্রেটারী। ২০/২১
বছর বয়সী খুব ছোট লাল রং এর স্ক্রার্ট পরা, পায়ে হাই হিল স্যান্ডাল, অর্ধ ঊন্মুক্ত
বুক! আমাদের দেখে মিস্টি হেঁসে ‘বো’ করলো। আমি ইংলিশে কিছু জানতে চাইলাম। তিনি হাত, মাথা ঝাকিয়ে জানালেন-“নো ইংলিশ”। তারপর আর
কথা বলার সুযোগ থাকেনা। কিন্তু লেডী সেক্রেটারী দমে গেলেননা। সে হাসি হাসি
মুখে মাও সে তুং এর লং মার্চের ছবি,বিশাল জন
সভায় বক্তৃতার ছবি, বিভিন্ন দেশের রাস্ট্র
প্রধানদের সাথে ছবির বর্ণনা সহ বিভিন্ন জিনিষ আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে
লাগলেন-আমরাও তার কথা না শুনে তাকেই... দেখলাম! দেখানো
শেষ হলে-মসজিদের একটা আলমিরা থেকে মদের বোতল এবং ছোট ছোট গ্লাশ বের
করে আমাদের মদ দিয়ে আপ্যায়ন করলো! আমাদের পিছনে সব সময়ই কমুনিস্ট পার্টির চ্যালারা
ঘুর ঘুর করতো! এখনকার
সময়ের মতো তখন পরিস্থিতি এতোটা
লিবারেল ছিলোনা।
আজ আমার অনেক ব্যাস্ততা। আমি যে সব মেশিনারীজ ইম্পোর্ট করার জন্য এলসি ওপেন করেছিলাম-সেই সব মেশিনারীজগুলো আমি এক বার দেখে নিচ্ছি। ঠিক মত প্যাকিং,মার্কিং,
ডকুমেন্টেশন হয়েছে কিনা ইত্যাদি।কারন চায়নীজরা ডকুমেন্টেশনে খুব দুর্বল। ওদের
অজ্ঞতা জনিত ভুলের খেশারত আমাদেরকে দিতে হয় কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তাদের। সেই অভিজ্ঞতা থেকে
প্রতিবারই শিপমেন্টের পুর্বে আমি/ আমার প্রতিনিধি চায়নাতে গিয়ে সরেজমিন চেক করে
শিপমেন্ট কনফার্ম করি।
সাইফুডিং কে ছুটি দিয়েছি-নানজিং
ঘুরে দেখার জন্য। রিচার্ডের একজন অফিসার নাম-এলান চো(Elan Choo) সাইফুডিং কে সময় দিচ্ছে। আমাকে রিচার্ডের সেক্রেটারী মিজ ভিকি(Viki) প্রথমে
ওদের ফ্যাক্টরীতে নিয়ে মেশিনারীজগুলো দেখালো। তারপর হেড অফিসে ফিরে সব ডকুমেন্টস
দেখাচ্ছে। লন্ডনে
লেখা পড়া জানা ভিকির সাথে আমার/ আমার অফিসের সবার সাথে খুব ভাব। কারন সে রিচার্ডের
সাথে বাংলাদেশে ২ বার এসেছিল। একাও এসেছিল তিন বার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন