চায়নার ডায়েরী-৮
নানজিং
০১/৯/২০০৭ইং
নানজিং অনেকটা আমাদের ঢাকা সিটির মত। মানে ওল্ড
নানজিং এবং নিঊ নানজিং। আমাদের যেমন পুরোনো ঢাকা টাইপের........। নিউ নানজিং অনেক গাছ আছে
রোডের দু পাশে। সেই গাছগুলোর বৈশিস্ট হলো-সব
গাছ, গাছের ডাল, উচ্চতা, পাতা দেখতে একই রকম। এমন একটা গাছ নেই-যে গাছটা
এক্টুখানি বাঁকা-ত্যাড়া, কিম্বা সামান্যতম ছোট বড়! আমি এক সময় মনে করতাম গাছগুলো
বোধ হয় আর্টিফিসিয়াল। তানাহলে কেমন করে এমন মিল হতে পারে একটা গাছের সাথে অন্য গাছের! আমি রিচার্ডের কাছে বিষয়টা জানতে চাইলাম। রিচার্ড
জানালো ওগুলো আর্টিফিসিয়াল গাছ নয়। ন্যাচারাল গাছ। গাছগুলো সুইজারল্যান্ড এবং
জার্মানী থেকে ইম্পোর্ট করে আনা। এই গাছ গুলো রোদের তাপ এবং আলোতে খুব সেন্সিটিভ। রোদ একদম সয্য করতে পারেনা (আমার
মত)। শীতের
সময় গাছগুলো স্বাভাবিক ভাবেই থাকে। গ্রীস্ম কালে
গাছ গুলোর শরির পাটের মোটা রশি দিয়ে জড়িয়ে রাখে।
প্রতি দিন দুই বার পানির গাড়ী এসে পানি দিয়ে ওই
পাটের রশি ভিজিয়ে দিয়ে যায়-যাতে রোদের তাপ/ আলো গাছে সরাসরি না লাগে। তখন দেখতে
অন্য রকম সৌন্দর্য! এই গাছের জন্য সরকারের অনেক খরচ। এমন গাছ চায়নার নানটং সিটিতে অনেক অনেক বেশী আছে। নানটং শীত প্রধান এরিয়া বলে সেখাকার গাছগুলোতে গ্রীস্ম কালে রশি বেঁধে
দিতে হয়না।
নানজিং এতোদিন পর্যন্ত সাবওয়ে/ পাতাল রেল ছিলনা।
দুই বছর যাবত সাবওয়ের কন্সট্রাকশন কাজ চলছে। সেই কারনে রোডে চলাচল করতে কিছুটা
অসুবিধা হয়। এই
নানজিং সিটি অনেক কারনে চায়নীজদের কাছে খুব গুরুত্বপুর্ন। মাও সে তুং যখন কোয়াংমিংটং
পার্টির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন তখন চিয়াং কাইসেক মাও সে তুং কে ফাঁসির আদেশ
দেন। মাও কে ধরতে নাপেরে মাও এর এক বোন এবং তার স্ত্রী কে ধরে ফাঁসি দিয়েছিলেন এই নানজিং শহরেই।
আমরা লাঞ্চ করি
রিচার্ডের অফিসের কাছেই একটা দামী রেস্টুরেন্টে।
আমরা ৪ জন। রিচার্ড, মিসেস রিচার্ড, ভিকি আর আমি। আমি আগেই
বলেছি-চায়নিজরা খুব অথিতি পরায়ন জাতি। তারা খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসে।তবে ওরা
প্রচুর খাবার অপচয়ও করে। প্রায় ২৭/২৮ টি আইটেম ছিল মেন্যুতে।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ন্যুডুলস, লবস্টার,
চিকেন, বীফ, ল্যম্ব, কাওইয়া(ডাক রোস্ট, চায়না ডাকের সুনাম পৃথিবীব্যাপী), শামুক,
ঝিনুক, ব্যাং এর পা, নানা পদের স্যুপ, বীন, কর্ণ, নাট, সব্জী ইত্যাদি। স্পেসাল খাবার ছিলো-বড়
কচ্ছপের পেটের ভিতর থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ ডিম।
প্রতিটা গুচ্ছে ৭০/৮০ টা ডিমের কম নয়। মুরগীর পেটের ভিতরে থাকা ডিম ছোট বড় হয়ে থাকে। কিন্তু কচ্ছপের
পেটের ভিতর থাকা সব ডিম একই আকারের হয়। কারন কচ্ছপ মুরগীর মত প্রতিদিন একটি করে
ডিম দেয়না। কচ্ছপ একবারেই সব ডিম দেয়। আরো একটা স্পেসাল খাবার ছিল-একধরনের পোকা।
আমাদের দেশে পঁচা গাছের ভিতর জন্ম নেয়া বড় বড়
সাস্থ্যবতী পোকা। পোকাগুলো
দেখতে অনেকটা সৌদি খেজুড়ের মতো। ঐ পোকার কোনো পাখা/ঠ্যাং নেই। শরিরটা নাদুস নুদুস নরম তুলতুলে। নরমালি গায়ের রঙ হলদে। হালকা ফ্রাই করার পর রঙ বাদামী/কালো হয়ে যায়। পেট ভর্তি ঘন লিকুইড
পদার্থ। ওটাকে সামান্য ফ্রাই করলে পেটের ভিতরের
লিকুইড পাদার্থটার কিছুটা ঘনত্ব বেড়ে যায়! পাটি সাপ্টা পিঠার ভিতরে
যেমন ক্ষীর দেয়া থাকে-তেমন দেখতে। ঐ পোকাগুলো চায়নীজরা খুব মজা করে খায়!
সব খাবারই
যথারিতী রান্না না বলে-অল্প সিদ্ধ বলাই ভালো। আমার কোন
খাবার পছন্দ সব ভিকি, রিচার্ড ও তার বৌ জানে, আরো জানে আমার অসুস্থ্যতার কথা-তাই আমার খাবার নিয়ে কেঊ কোন
জোড়া জুড়ি করেনা। সব পদের খাবারই সামনে দেয়া থাকে-আমার যেটা পছন্দ সেটা নিয়েই আমি
খাই ঘড়ের খাবারের মত।
লাঞ্চ করে আমি আবারো চলে যাই ওদের ফ্যাক্টরীতে।
এবার আমার সাথে মিসেস ওয়াং। রিচার্ড ওয়াং এর আরো নতুন বায়ার এসেছে নাইজেরিয়া থেকে।
রিচার্ড এবং ভিকি তাকে সময় দিচ্ছে। সাইফুডিং বিকেল নাগাদ
ফ্যাক্টরীতে আমাদের সাথে জয়েন করলো। আমি ওদের খাওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলাম। এলান
চো বললো-“মিত্তার কবির, সাইফুডিং হ্যাজ ইট মী আপ টু থ্রোট। সো আই ঊইল নট ইট নেক্ত টু ডেজ”! পাঠক আপনারা এলান চো’র
ইংলিশের কোন আগা মাথা বুঝতে পেরেছেন? না পারেননি। তাই আমি এই ইংলিশের অর্থ বুঝিয়ে
দিচ্ছি-“সাইফুডিং আমাকে খাইয়েছে গলা
পর্যন্ত। সুতরাং আমি আগামী দুই দিন খাবোনা”!
আমাদের কাজ শেষ হলে আমাদেরকে হোটেলে ড্রপ করে
মিসেস ওয়াং চলে যায় অফিসে। আমাদেরকে সন্ধ্যা
সাতটায় রেডি থাকার জন্য বলা হলো ডিনারের জন্য।
আমরা ফ্রেশ হয়ে রেডি হতেই ঠিক সাতটার সময় মিসেস
ওয়াং এলেন আমাদের ডিনারে নেবার জন্য। এবার রিচার্ড ওয়াং আসেনি। তিনি নাইজেরিয়ান
বায়ারদের সময় দিচ্ছেন।আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ম্যাকডোনালসে ডিনার করি। রাত সারে নয়টার সময় হোটেল রুমে ফিরে আসি।
রোজা চলছে কিন্তু
রোজা বিষয় রিচার্ডকে কিছুই জানালামনা। কারন ওদের রোজা সম্পর্কে বোঝাতে এক দিন
লাগবে! তার উপর আমাদের সেহরী খাবারের কথা যেনে অন্য রকম একটা ঝামেলা করবে। আমরা ওদেরকে কস্ট দিতে চাইনা। রাতে
সেহরী খেতে হবে। আমি সেহরী করি এক গ্লাশ পানি
সাথে একটি খেজুর কিম্বা একটা বিস্কুট দিয়ে।
সাইফুডিং এর জন্য ম্যাকডোনালস থেকে সেহরীর খাবার নিয়ে নিলাম।
আমরা কাল সকাল ৬ টায় চলে যাব নানটং। আমরা বাই রোড
যাবো। ৪ তারিখ
সকালেই আবার নানটং থেকে নানজিং ফিরবো। কারন ৪ তারিখ সকাল সারে দশটায় নানজিং
থেকে আমাদের কুনমিং যাবার ফ্লাইট রিকনফার্ম করা
আছে। আমাদের নানটং নিয়ে যাবার জন্য-ওখানকার বিজিনেস প্রিন্সিপাল মিঃ ডেনিয়েল সি(Daniel
Shi) রাতেই তার জীপ গাড়ী নিয়ে চলে এসেছে এবং আমাদের
হোটেলেই সে ঊঠেছে।আমরা হোটেল রুমে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেই। ডেনিয়েলের সাথে রোজা বিশয় অনেক কথা হয়েছিল আমাদের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন