বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

চায়নার ডায়েরী-৪



চায়নার ডায়েরী-
সাংহাই
৩০//২০০৭ইং 

রাতে আমার ভাল ঘুম হয়নিবার বার ডিনারে দেয়া শুয়োরের রক্তাক্ত মগজটা চোখে ভাসছিলোশাওয়ার করে নামাজ পরে নিলামকিছুক্ষণ সামহোয়ারব্লগ ভিজিট করিকিন্তু আজ আমার প্রিয় কোন লেখখকের লেখা পেলামনাইদানীং আবার কিছু ব্লগার অহেতুক একটা নোংড়া পরিবেশ সৃস্টির পায়তারা করছে! নেট থেকে বেড়িয়ে পত্রিকা উল্টালামভালো লাগছেনা! টিভি দেখবো-তাও ইচ্ছে করছেনাএখানে শুধু মাত্র সিসি টিভি- নামক একটা রাস্ট্রীয় চ্যানেল ফ্রী দেখানো হয়যেখানে শুধু সরকারী প্রপগান্ডা-আমাদের বিটিভির মতঅন্যান্য সব চ্যানেল 'পে-চ্যানেল'- বেশীরভাগ পে-চ্যাণেলগুলোই  শুধু নীল ছবি দেখায়ঢাকাতে বাসায় অনেক্ষন কথা বললামচায়নাতে সেল ফোনে বেশী কথা বলা সম্ভব নয়চায়নার মোবাইল ফোন হলো "শাখের করাত"যেতেও কাটে, আসতেও কাটে! অর্থা, এখানে ইনকামিং এবং আঊটগোয়িং সমান ভাবে বিল াটে!

কিছুক্ষণ পর পর টেলিফোন বাজে- টেলিফোন তোলার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে ভেষে আসে............"গুদ নাইত স্যার...দু ইউ ওয়ান্ত মাসাসী"? আমি "নো" বলি
আবার কিছুক্ষণ পর ফোন বাজে...... "গুদ নাইত স্যার...দু ইউ ওয়ান্ত মাসাসী"?
আমি "নো" বলিআবারো ফোন আসে............ রাত ১২ টা পর্যন্ত এই মাসাসীরা জ্বালায়... মাসাসী শব্দে অর্থ "মেসাজ"মাসাসীরা হলো চোখ ধাধানো চায়নীজ সুন্দরী হোটেল গার্লচায়নার সব স্টার হোটেল গুলোতে এরা ঘুরে বেড়ায় খদ্দেরের আশায়এদের রেইট ডিপেন্ড করে-খদ্দের কে কি কতটুকু করতে চায়-তার উপরশুধু মাত্ "মেসেজ" করানো যায়কিন্তু ওইটুকু করাতে গেলে পরবর্তীটুকু......... করানো শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার! সব কিছুই করানো যায় অন পেমেন্টহোটেল ওয়ালারাই এদেরকে পোষেকমপ্লেন করে কোন লাভ হয়না। জোড় করবেনা তবে ওদেরকে এভয়েট করার মত মানষিক দৃঢ়তা থাকতে হবে

শনিবারচায়নীজদের সব অফিস অর্ধেক বেলামানে এদের টাইম দুইটায় সব অফিস বন্ধ হয়ে যাবেরোববার পুরো দিন ছুটিচায়নিজরাও এখ আমেরিকান, ইউরোপীয়ানদের মত ছুটির দিন কাটাতে অনেক দূরে যায়সারা দিন হৈ হুল্লোর করে কাটায় দল বেধেপ্রচুর পান করে! এদের এখ অনেক কাঁচা টাকাতার প্রকা সর্বত্র

জয়েস আমাদের নিতে হোটেলে আসতেই আমি মাসাসী বিষয় কমপ্লেন করলামজয়েস মাথা বাও করে বললো-বাওকিয়ান, দুইবুকি, দুইবুকি...(সরি, আই য়্যম সো সরি......), আমি আজ হোটেল ওয়ালাদের বলে দেবো-যাতে তোমাকে কেউ ডিস্টার্ব না করে

আমাদের সাথে আজ চায়না কোম্পানীর ফাইনাল এগ্রীমেন্ট হবেপুর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেইজিং থেকে সাংহাই আসবেন আমাদের দুতাবাসের কমার্স সেক্রেটারী এবং চায়নায় UNFPA অফিসের ডেপুটী চীফতারা দুজনে সোয়া দুই ঘন্টার এয়ার জার্নি করে সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটের সময় সাংহাই পৌছলেনতাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে আমাদের সাথে কোম্পানীর সি নিজেই আরো জন উচ্চ পদস্থ্য অফিসার সহ এয়ারপোর্ট এসেছেনজয়েসতো আমাদের সাথে সার্বোক্ষনিক আছেইআমরা তাদেরকে নিয়ে সরাসরি সাংহাই ল্যাটেস্ক ফ্যাক্টরির অফিসে যাইগেস্ট দুইজন ওদের রেস্ট হাঊসের ভিয়আইপি রুমে বাকীটা সময় কাটাবেনদুপুরের ফ্লাইটেই এই দুইজন বেইজিং ফিরে যাবেনকারন, কালকের ছুটির দিনটা তাঁরা পরিবারের সাথে কাটাবেন

ওনারা ফ্রেস হবার পর হাল্কা কিছু খাবার খেয়ে আমাদের এগ্রীমেন্ট অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেকমার্স সেক্রেটারী এবং ইঊ এন এফ পি ডেপুটি চীফ দুইজন ঊইটনেস হিসাবে এগ্রীমেন্ট সই করেনটমী, জিমী দুইজন এগ্রীমেন্টে কাঊন্টার সাইন করেনআমার কোম্পানী এবং সাংহাই ল্যাটেক্স ফ্যাক্টরির পক্ষে সই করি যথাক্রমে আমি এবং সি তারপর বিশিষ্ট দুইজন গেস্টের ইচ্ছায় খুব সাধারন মানের লাঞ্চ হয়যে খাবার কে এফ সি থেকে আনা হয়েছিলোআমি একটা জিনিষ লক্ষ্য করেছি-দুনিয়ার সব দেশেই কে এফ সি/ ম্যাকডোনালসের খাবারের স্বাদ একই রকম! লাঞ্চের পর আমাদের সকলের হাতে বেশ দামী চায়নীজ ঐতিহ্যবাহী পেইন্টিং ছারাও গিফট বক্স দিলোআমিও আমার সাথে আড়ং থেকে কিনে নেয়া নানা গিফট দিলাম সবাইকেলাঞ্চের পর আধা ঘন্টা রেস্ট করে বিকেল দেড় টার সময় ওনাদের নিয়ে এয়ারপোর্ট চলে যাইআজ সন্ধা টায় আমাদের গ্রান্ড/ফেয়ারওয়েল ডিনার দিচ্ছে কোম্পানী

আজ সারাদিন হাল্কা গুড়ি গুড়ি বৃস্টি পরছেকিছুটা ঠান্ডাও লাগছেযদিও তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী সেঃআমি ঢাকায় অফিসে কথা বললামকিছুই ভালো লাগছিলনা আমারশরীরটা খু দুর্বলনীচে নেমে এলাম সাইফুডিংকে নিয়েকিছুক্ষন ঘুরে ফিরে রুমে ফিরি

ঠিক পৌনে ছয়টার সময় জয়েস আমাদের নিতে আসেআজও আমদের নিয়ে একটা দামী রেস্টুরেন্টে যায়১৬ তলায় রেস্টুরেন্ট অবস্থিতএখানে হেভী মেটাল মিউজিক হচ্ছেসুন্দরী মেয়েরা শর্স্টস, স্লীভলেস টি শার্ট, টপ্স পরে ঊন্মাতাল ডান্স করছে, গান গাইছে ড্রামের তালে তালেদর্শক শ্রোতারা হুমড়ী খেয়ে পড়ছে ওদের ঊপড়সবাই টাকা ছুড়ে মারছে ওদের দিকেআমাদের নামগুলো এবং দেশের নাম নিয়ে আমাদের নামেও গান বেধে গান গাইছে বেশী টিপস পাবার লোভে! এটা ওদের ব্যাবসায়ীক স্বভাব-যে কো গেস্টের নামে গান করে খুশী করার

আমাদের জন্য একের পর এক খাবার আসছেপ্রথমে আসছে ড্রীংকস তারপরে সালাদএকধরনের পাতার ঊপর (পাতাটা দেখতে কিছুটা আমাদের পুঁই পাতার মত)বেশ মোটা করে কিযেনো লাগানো একটা পাদার্থ আমাদের সামনে দেয়া হলোদেখতে মাছের ডিমের মত লাগেএকটা কাগজে বড় করে কম্পিউটারে ইংলিশে লেখা স্পেসিয়াল ডিস ফর অনারেবল গেস্টযখনী খাবারটা আমাদের সার্ভ করলো-তখ সবাই হাত তালি দিলোআমি জয়েসকে জানতে চাইলাম-জিনিষ্টা কি? জয়েস বিজয়ের হাসি হেসে বললো-'Crab Roe' মানে কাকড়ার ডিমআমি কালকের মত তরমুজ, শশা, গাজর িয়ে সময় পার করছিআমি নিজ থেকেই অর্ডার করেছিলাম বেবী কর্ণ, কিং প্রণ/ লবেস্টারইয়া বড় লাল রঙ এর সামুদ্রীক লবেস্টারআমি আমার অর্ডার দেয়া খাবারগুলোতে মনোযোগী হলামসবাই অর্ধ নগ্ন মেয়েতে মশগুলসেই ফাকে আমি আমার সামনে থেকে বাজে খাবারগুলো সরিয়ে ফেলছিআমি ন্যুডুলস, শ্রিম্প, লবেস্টার নিয়েই কুট কুট করে খাচ্ছিআমাদের সাথের 'টমী' মাতাল হয়ে যাচ্ছেন! আমাকে বল্লেন-"কবির সাব, আমার ভিতরে কার্য্যকরিতা শুরু য়ে গিয়েছে........."! আমি ঝটপট তার ছবি তুলে নিচ্ছি.........মেয়েদের সাথেও ওদের দুজনের বেশ কিছু অন্তরংগ ছবি নিতে ভুল করিনিমাতাল অবস্থায় একজন বলছেন-"কবির সাব, এই ছবি যেনো ঢাকাতে কেউ না দেখে..............."! ওরা দুজন সব খাবারই খাচ্ছে-কোন হুশ নেইযা দিচ্ছে-তাই খাচ্ছেআমার সাইফুডিংও খাচ্ছে-আমার নিষেধ ঊপেক্ষা করে

এবার একটা খাবার আসলো অদ্ভুত রকমেরযেমনটি কাল বড় একটা থালাতে নিয়ে এসেছিলোআজকেরটা ঢেকে রাখার পরেও দেখা যাচ্ছেবড় চিংড়িমাছের গোপের মত বেড়িয়ে রয়েছেএবারো সেই কাগজের লেখাটা......স্পেশাল ডিস ফর অনারেবল গেস্টসবাই হাত তালি দিয়ে ইশ করলো খাবারটাকেআমি ঢাকনার বাহির থেকে চিংড়ির গোপ দেখে কিং প্রণ ফ্রাই মনে করে ুশী হলামযখনই খাবারের ঢাকনাটা তুলেনিল-আমার চোখ দুটো ছানা বড়া! আস্ত একটা কিং সাইজ অক্টোপাস!শুধু সিদ্ধ করাউপড়ে কিছু গোল মরিচের গুড়া ছড়ানোগোপগুলো পোড়া পোড়াসাড়া শরীরের আটালো পদার্থ, পায়ের কাটা গুলো হা করে তাকিয়ে আছেআমার শরীর শির শির করছে, লোমগুলো সব াটা দিয়ে আছে! কেজির কম ওজন হবেনা ওটায়! মনে হয় যেনো এখোনি অক্টোপাসটা আমাকে আটকে ধরবে!

আমার মাথা ঘুরাচ্ছেচোখে অন্ধকার দেখছিমনে হচ্ছে আমি এখনি বেহুশ হয়ে পরে যাবোআমি আল্লাহকে শ্মরণ করলাম-যেনো বেহুশ নাহয়ে যাইঅন্যরা বিষয়টা খেয়াল করছেনাআমাদের সাথের ন্য জন মদের নেশায় বেহুশ, মেয়ে সিঙ্গারদের আবৃত অংগ বাদ দিয়ে অনাবৃত্ব অংগও দেখায় উতসুক ব্যাস্তআমি নিজেই হোস্টের ভুমিকা নিলামখুব ভালো খাবার দেখে খুশী হবার ভান করে নিজেই সবাইকে কেটে প্লেটে তুলে দিতে শুরু করিআমি সাইফুডিংকে দিলামনাদেখি সে আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে-এমন একটা খাবারের টেস্ট থেকে তাকে বঞ্চিত করার দুঃখে

বাকী লেখা আগামী কাল পড়ুনঃ-

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন