চায়নার ডায়েরী-৪
সাংহাই
৩০/৮/২০০৭ইং
রাতে আমার
ভাল ঘুম
হয়নি। বার
বার ডিনারে
দেয়া শুয়োরের
রক্তাক্ত মগজটা
চোখে ভাসছিলো। শাওয়ার
করে নামাজ
পরে নিলাম। কিছুক্ষণ
সামহোয়ারব্লগ ভিজিট
করি। কিন্তু
আজ আমার
প্রিয় কোন
লেখখকের লেখা
পেলামনা। ইদানীং
আবার কিছু
ব্লগার অহেতুক
একটা নোংড়া
পরিবেশ সৃস্টির
পায়তারা করছে!
নেট থেকে
বেড়িয়ে পত্রিকা
উল্টালাম। ভালো
লাগছেনা! টিভি
দেখবো-তাও
ইচ্ছে করছেনা। এখানে
শুধু মাত্র
সিসি টিভি-৯
নামক একটা
রাস্ট্রীয় চ্যানেল
ফ্রী দেখানো
হয়। যেখানে
শুধু সরকারী
প্রপগান্ডা-আমাদের
বিটিভির মত। অন্যান্য
সব চ্যানেল
'পে-চ্যানেল'- বেশীরভাগ পে-চ্যাণেলগুলোই শুধু
নীল ছবি
দেখায়। ঢাকাতে
বাসায় অনেক্ষন
কথা বললাম। চায়নাতে
সেল ফোনে
বেশী কথা
বলা সম্ভব
নয়। চায়নার
মোবাইল ফোন
হলো "শাখের
করাত"। যেতেও
কাটে, আসতেও
কাটে! অর্থাৎ, এখানে
ইনকামিং এবং
আঊটগোয়িং সমান
ভাবে বিল
কাটে!
কিছুক্ষণ পর
পর টেলিফোন
বাজে- টেলিফোন
তোলার সাথে
সাথে অপর
প্রান্ত থেকে
ভেষে আসে............"গুদ
নাইত স্যার...দু
ইউ ওয়ান্ত
মাসাসী"? আমি "নো"
বলি।
আবার কিছুক্ষণ
পর ফোন
বাজে...... "গুদ
নাইত স্যার...দু
ইউ ওয়ান্ত
মাসাসী"?
আমি "নো"
বলি। আবারো
ফোন আসে............
রাত ১২
টা পর্যন্ত
এই মাসাসীরা
জ্বালায়... মাসাসী
শব্দের অর্থ
"মেসাজ"। মাসাসীরা
হলো চোখ
ধাধানো চায়নীজ
সুন্দরী হোটেল
গার্ল। চায়নার
সব স্টার
হোটেল গুলোতে
এরা ঘুরে
বেড়ায় খদ্দেরের
আশায়। এদের
রেইট ডিপেন্ড
করে-খদ্দের
কে কি
কতটুকু করতে
চায়-তার
উপর। শুধু
মাত্র "মেসেজ"
করানো যায়। কিন্তু
ওইটুকু করাতে
গেলে পরবর্তীটুকু.........
করানো শুধু
মাত্র সময়ের
ব্যাপার! সব
কিছুই করানো
যায় অন
পেমেন্ট। হোটেল
ওয়ালারাই এদেরকে
পোষে।কমপ্লেন
করে কোন
লাভ হয়না।
জোড় করবেনা তবে ওদেরকে এভয়েট করার
মত মানষিক
দৃঢ়তা থাকতে
হবে।
শনিবার। চায়নীজদের
সব অফিস
অর্ধেক বেলা। মানে
এদের টাইম
দুইটায় সব
অফিস বন্ধ
হয়ে যাবে। রোববার
পুরো দিন
ছুটি। চায়নিজরাও
এখন আমেরিকান, ইউরোপীয়ানদের
মত ছুটির
দিন কাটাতে
অনেক দূরে
যায়। সারা
দিন হৈ
হুল্লোর করে
কাটায় দল
বেধে। প্রচুর
পান করে!
এদের এখন
অনেক কাঁচা
টাকা। তার
প্রকাশ সর্বত্র।
জয়েস আমাদের
নিতে হোটেলে
আসতেই আমি
‘মাসাসী’ বিষয়
কমপ্লেন করলাম। জয়েস
মাথা বাও
করে বললো-“বাওকিয়ান, দুইবুকি, দুইবুকি...(সরি, আই
য়্যম সো
সরি......), আমি আজ
হোটেল ওয়ালাদের
বলে দেবো-যাতে
তোমাকে কেউ
ডিস্টার্ব না
করে”।
আমাদের সাথে
আজ চায়না কোম্পানীর ফাইনাল
এগ্রীমেন্ট হবে। পুর্ব
সিদ্ধান্ত মোতাবেক
বেইজিং থেকে
সাংহাই আসবেন
আমাদের দুতাবাসের
কমার্স সেক্রেটারী
এবং চায়নায়
UNFPA’র অফিসের
ডেপুটী চীফ। তারা
দুজনে সোয়া দুই
ঘন্টার এয়ার
জার্নি করে
সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটের
সময় সাংহাই
পৌছলেন। তাদেরকে
অভ্যর্থনা জানাতে
আমাদের সাথে
কোম্পানীর সি
ই ও
নিজেই আরো
২ জন
উচ্চ পদস্থ্য
অফিসার সহ
এয়ারপোর্ট এসেছেন। জয়েসতো
আমাদের সাথে
সার্বোক্ষনিক আছেই। আমরা
তাদেরকে নিয়ে
সরাসরি সাংহাই
ল্যাটেস্ক ফ্যাক্টরির
অফিসে যাই। গেস্ট
দুইজন ওদের
রেস্ট হাঊসের
ভিয়আইপি রুমেই বাকীটা
সময় কাটাবেন। দুপুরের
ফ্লাইটেই এই
দুইজন বেইজিং
ফিরে যাবেন। কারন, কালকের
ছুটির দিনটা
তাঁরা পরিবারের
সাথে কাটাবেন।
ওনারা ফ্রেস
হবার পর
হাল্কা কিছু
খাবার খেয়ে
আমাদের এগ্রীমেন্ট
অনুষ্ঠান সম্পন্ন
করে।কমার্স
সেক্রেটারী এবং
ইঊ এন
এফ পি
এ’র
ডেপুটি চীফ
দুইজন ঊইটনেস
হিসাবে এগ্রীমেন্ট
সই করেন। টমী, জিমী
দুইজন এগ্রীমেন্টে
কাঊন্টার সাইন
করেন। আমার
কোম্পানী এবং
সাংহাই ল্যাটেক্স
ফ্যাক্টরির পক্ষে
সই করি
যথাক্রমে আমি
এবং সি
ই ও। তারপর
বিশিষ্ট দুইজন
গেস্টের ইচ্ছায়
খুব সাধারন
মানের লাঞ্চ
হয়। যে
খাবার কে
এফ সি
থেকে আনা
হয়েছিলো। আমি
একটা জিনিষ
লক্ষ্য করেছি-দুনিয়ার
সব দেশেই
কে এফ
সি/ ম্যাকডোনালসের
খাবারের স্বাদ
একই রকম!
লাঞ্চের পর
আমাদের সকলের
হাতে বেশ
দামী চায়নীজ
ঐতিহ্যবাহী পেইন্টিং
ছারাও গিফট
বক্স দিলো। আমিও
আমার সাথে
আড়ং থেকে
কিনে নেয়া
নানা গিফট
দিলাম সবাইকে। লাঞ্চের
পর আধা
ঘন্টা রেস্ট
করে বিকেল
দেড় টার
সময় ওনাদের
নিয়ে এয়ারপোর্ট
চলে যাই। আজ
সন্ধা ৬
টায় আমাদের
গ্রান্ড/ফেয়ারওয়েল
ডিনার দিচ্ছে
কোম্পানী।
আজ সারাদিন
হাল্কা গুড়ি
গুড়ি বৃস্টি
পরছে। কিছুটা
ঠান্ডাও লাগছে। যদিও
তাপমাত্রা ২০
ডিগ্রী সেঃ।আমি
ঢাকায় অফিসে
কথা বললাম।কিছুই
ভালো লাগছিলনা
আমার। শরীরটা
খুব দুর্বল। নীচে
নেমে এলাম
সাইফুডিংকে নিয়ে। কিছুক্ষন
ঘুরে ফিরে
রুমে ফিরি।
ঠিক পৌনে
ছয়টার সময়
জয়েস আমাদের
নিতে আসে। আজও
আমদের নিয়ে
একটা দামী
রেস্টুরেন্টে যায়। ১৬
তলায় রেস্টুরেন্ট
অবস্থিত। এখানে
হেভী মেটাল মিউজিক
হচ্ছে। সুন্দরী
মেয়েরা শর্স্টস, স্লীভলেস
টি শার্ট, টপ্স
পরে ঊন্মাতাল
ডান্স করছে, গান
গাইছে ড্রামের
তালে তালে। দর্শক
শ্রোতারা হুমড়ী
খেয়ে পড়ছে
ওদের ঊপড়। সবাই
টাকা ছুড়ে
মারছে ওদের
দিকে। আমাদের
নামগুলো এবং
দেশের নাম
নিয়ে আমাদের
নামেও গান
বেধে গান
গাইছে বেশী
টিপস পাবার
লোভে! এটা
ওদের ব্যাবসায়ীক
স্বভাব-যে
কোন গেস্টের
নামে গান
করে খুশী
করার।
আমাদের জন্য
একের পর
এক খাবার
আসছে। প্রথমে
আসছে ড্রীংকস
তারপরে সালাদ। একধরনের
পাতার ঊপর
(পাতাটা দেখতে
কিছুটা আমাদের
পুঁই পাতার
মত)বেশ
মোটা করে
কিযেনো লাগানো
একটা পাদার্থ
আমাদের সামনে
দেয়া হলো। দেখতে
মাছের ডিমের
মত লাগে।একটা
কাগজে বড়
করে কম্পিউটারে
ইংলিশে লেখা
“স্পেসিয়াল
ডিস ফর
অনারেবল গেস্ট”। যখনী
ঐ খাবারটা
আমাদের সার্ভ
করলো-তখন
সবাই হাত
তালি দিলো। আমি
জয়েসকে জানতে
চাইলাম-‘জিনিষ্টা
কি’? জয়েস
বিজয়ের হাসি
হেসে বললো-'Crab Roe' মানে
কাকড়ার ডিম। আমি
কালকের মত
তরমুজ, শশা, গাজর
নিয়ে সময়
পার করছি। আমি
নিজ থেকেই
অর্ডার করেছিলাম
বেবী কর্ণ, কিং
প্রণ/ লবেস্টার। ইয়া
বড় লাল
রঙ এর
সামুদ্রীক লবেস্টার। আমি
আমার অর্ডার
দেয়া খাবারগুলোতে
মনোযোগী হলাম। সবাই
অর্ধ নগ্ন
মেয়েতে মশগুল। সেই
ফাকে আমি
আমার সামনে
থেকে বাজে
খাবারগুলো সরিয়ে
ফেলছি। আমি
ন্যুডুলস, শ্রিম্প, লবেস্টার
নিয়েই কুট
কুট করে
খাচ্ছি। আমাদের
সাথের 'টমী' মাতাল
হয়ে যাচ্ছেন!
আমাকে বল্লেন-"কবির
সাব, আমার
ভিতরে কার্য্যকরিতা
শুরু হইয়ে
গিয়েছে........."! আমি
ঝটপট তার
ছবি তুলে
নিচ্ছি.........। মেয়েদের
সাথেও ওদের
দুজনের বেশ
কিছু অন্তরংগ
ছবি নিতে
ভুল করিনি। মাতাল
অবস্থায় একজন
বলছেন-"কবির
সাব, এই
ছবি যেনো
ঢাকাতে কেউ
না দেখে..............."!
ওরা দুজন
সব খাবারই
খাচ্ছে-কোন
হুশ নেই। যা
দিচ্ছে-তাই
খাচ্ছে। আমার
সাইফুডিংও খাচ্ছে-আমার
নিষেধ ঊপেক্ষা
করে।
এবার একটা
খাবার আসলো
অদ্ভুত রকমের। যেমনটি
কাল বড়
একটা থালাতে
নিয়ে এসেছিলো। আজকেরটা
ঢেকে রাখার
পরেও দেখা
যাচ্ছে। বড়
চিংড়িমাছের গোপের
মত বেড়িয়ে
রয়েছে। এবারো
সেই কাগজের
লেখাটা......স্পেশাল
ডিস ফর
অনারেবল গেস্ট। সবাই
হাত তালি
দিয়ে উইশ
করলো খাবারটাকে। আমি
ঢাকনার বাহির
থেকে চিংড়ির
গোপ দেখে
কিং প্রণ
ফ্রাই মনে
করে খুশী
হলাম। যখনই
খাবারের ঢাকনাটা
তুলেনিল-আমার
চোখ দুটো
ছানা বড়া!
আস্ত একটা
কিং সাইজ
অক্টোপাস!শুধু
সিদ্ধ করা। উপড়ে
কিছু গোল
মরিচের গুড়া
ছড়ানো। গোপগুলো
পোড়া পোড়া। সাড়া
শরীরের আটালো
পদার্থ, পায়ের
কাটা গুলো
হা করে
তাকিয়ে আছে। আমার
শরীর শির
শির করছে, লোমগুলো
সব কাটা
দিয়ে আছে!
৫ কেজির
কম ওজন
হবেনা ওটায়!
মনে হয়
যেনো এখোনি
অক্টোপাসটা আমাকে
আটকে ধরবে!
আমার মাথা
ঘুরাচ্ছে। চোখে
অন্ধকার দেখছি। মনে
হচ্ছে আমি
এখনি বেহুশ
হয়ে পরে
যাবো। আমি
আল্লাহকে শ্মরণ
করলাম-যেনো
বেহুশ নাহয়ে
যাই। অন্যরা
বিষয়টা খেয়াল
করছেনা। আমাদের
সাথের অন্য
৩ জন
মদের নেশায়
বেহুশ, মেয়ে
সিঙ্গারদের আবৃত অংগ বাদ দিয়ে অনাবৃত্ব
অংগও দেখায় উতসুক
ব্যাস্ত। আমি
নিজেই হোস্টের
ভুমিকা নিলাম। খুব
ভালো খাবার
দেখে খুশী
হবার ভান
করে নিজেই
সবাইকে কেটে
প্লেটে তুলে
দিতে শুরু
করি। আমি
সাইফুডিংকে দিলামনা। দেখি
সে আমার
দিকে বার
বার তাকাচ্ছে-এমন
একটা খাবারের
টেস্ট থেকে
তাকে বঞ্চিত
করার দুঃখে।
বাকী লেখা
আগামী কাল
পড়ুনঃ-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন