বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

চায়নার ডায়েরী-৫



চায়নার ডায়েরী-৫
সাংহাই
৩০/৮/২০০৭ইং 

এবার এলো আবারো এক রাঊন্ড স্যুপ। এবারের স্যুপটা দেখতে অন্য রকম। স্যুপের বাটির মধ্যে অর্ধ সিদ্ধ গোলাকার, কিছুটা লম্বা রাজ হাসের ডিমের সাইজ একটা বস্তু ভাসছে। এই স্যুপ দেখে সব চায়নীজরা হৈ-হৈ করে ঊঠলো। আমি এখোন আর খুশী হইনা-যা দেখে ওরা খুশী হয়! আমি বুঝে গিয়েছি-যা কিছু আমাদের জন্য নেগেটিভ খাবার-তাই ওদের জন্য ডেলিসিয়া! আমি জয়েসকে জানতে চাইলাম-এই মহা মুল্যবান স্যুপটা কিষের তৈরী?

পাঠক, আপনারা পড়ে/শুনে মাথা ঘুড়ে পরে যাবেননা। জয়েস বললো-মিঃ কবির, এটা হলো অক্স মেইল অর্গান দিয়ে তৈরী স্যুপ। ভাসমান বস্তুটা হলো মেইল অর্গানের সিঙ্গেল বল(Testis)! নর্মালি ষাড়ের ২ টা বল হয়। কিন্তু কিছু কিছু ষাড়ের ১ টা বল হয়। যে সব ষাড়ের একটা বল হয়-তা হলো চায়নীজদের কাছে শক্তির প্রতিক! এবং এই ধরনের দুষ্প্রাপ্য সিংগেল বল ষাড়ের মেইল অর্গাণ দিয়ে তৈরী স্যুপ অত্যন্ত সুস্বাদু! এটা হলো চায়নার সব চাইতে ডেলিসিয়াস স্যুপ! এই স্যুপ শুধু মাত্র সাংহাইয়ের হাতে গোনা ৩/৪ টি রেস্টুরেন্টে তৈরী হয়! এই স্যুপটা পুরুষ-মহিলারা খেলে তাদের বিষেশ পারফমেন্স বেড়ে যায়। এই স্যুপ খেতে সুদুর ইউরোপ থেকে পর্যন্ত চায়নাতে পর্যটক আসে!

আমি টিটকারী মেরে জয়েসকে বল্লাম-...... আমি এই স্যুপ খাবোনা, আমার ভাগের খাবারটা তোমার বয় ফ্রেন্ডের জন্য নিয়ে যাও.........তার পার্ফরমেন্স বাড়াতে! আর মনে মনে বল্লাম(খা, হারামজাদী-তোরা খা, ওই সব আমাদের দেশে কুত্তায়ও খায়না!!!)।

রাত ১১টা। এই সব হোটেল রেস্টুরেন্টে রাত ৩/৪ টা পর্যন্ত থাকা যায়। ১২ টার পর চালু হয় ক্যাসিনো। ক্যাসিনো চালানোর পার্মিশন আছে এদের। আমদের খাওয়া শেষ, আমরা ঊঠবো। ওরা বিল মিটিয়ে দিল। আমিও ওই সিঙ্গারদের কিছু টিপস দিলাম। ওরা বো করলো। মিঊজিকের তালে তালে আমাদের লিফটের দড়জা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।

আমার সাইফুডিং হাটতে পারছেনা! পা জড়িয়ে যাচ্ছে। টমী আর জিমীর অবস্থাও তেমন। আমাদেরকে হোটেল লবিতে পৌছে দিয়ে জয়েস এবং অন্যরা চলে গেলো। লিফটের ভিতর ওরা তিন জন মাতলামী শুরু করলো। আমি কোনো রকম ধরে দুজনকে রুমে দিয়ে চলে এলাম। ফিরে দেখি সাইফুডিং পথেই পরে আছে! শুধু উলটা পালটা কথা বলছে। আমি ওকে বকা দিলাম। তাতে ওর কোনোই ভ্রুক্ষেপ নেই। সে কি যেনো উল্টা পাল্টা বলেই যাচ্ছে। আমি জয়েসকে কল করলাম। জয়েস আর টম ডিং ফিরে এল। টম ডিং টমী, জিমী দুজনকে সামলাচ্ছে, আমি আর জয়েস সাইফুডিংকে সামলাচ্ছি। নিজে সেইফ সাইডে থাকার জন্য হোটেল কর্তিপক্ষকে টমী-জিমীর ওভার ড্রাকংড হবার বিষয় জানিয়ে রাখলাম। যদিও ঐ দুই জন ড্রীংক করায় অভ্যস্ত। আমি ধারনা করতাম সাইফুডিং এতোটা নরম নয়। কারন আজ ৩/৪ বছর যাবত সেই আমার বিদেশী মেহমানদের ঢাকাতে প্রটোকল দিচ্ছে! সব সময় হোটেলে সময় দেয়।

এক পর্যায় সাইফুডিং জয়েসকে জড়িয়ে ধরলো! আমি রেগে গিয়ে জোড়ে ওকে ধমক দিলাম। এখন সাইফুডিং হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলো! আমি রাগ হয়ে বললাম-শালার বাচ্চা(আমি রাগ করে এই গালিটাই দেই সব সময়), কান ধর, তোকে বার বার বলেছিলাম-ওই সব যাতা খাইসনা......... কান ধর, বল জীবনে আর খাবিনা! সাইফুদ্দিন একবার বসে আবার দৌড় দেয়। আমি শক্ত করে ধরে আছি। অমনি আমার গায়ে বমি করে দিলো! আমি আর জয়েস ওকে টেনে বাথ রুমে নিয়ে যাই। শাওয়ার ছেরে দিলাম। এখোনো ঠিক হচ্ছেনা। ঊল্টো আমার গায়ে পানি ছিটাচ্ছে! আমি আবারো চিতকার করে বল্লাম-কান ধর, তওবা কর, নাহলে তোকে জানালা দিয়ে ছুড়ে বাইরে ফেলে দেবো শালার বাচ্চা। তখন সাইফুডিং কান ধরার চেস্টা করছে-কিন্ত পারছেনা। আমাকে বলছে-স্যার আমার কান খুজে পাচ্ছিনা! আমি তখন ওর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা। ইতিমধ্যে জয়েস ফ্রীজ থেকে লেবু বের করে কেটে গ্লাশে অনেকখানি রস বের করে আনে। ওকে হা করিয়ে সব রস মুখে ঢেলে দেই। কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখি সাইফুডিং বাথ রুমেই নেতিয়ে পরছে। দুজনে ওকে টেনে বিছানায় তুলে দেই। জয়েস চলে যায় টম ডিং কে নিয়ে।

আমার গায়ে বমি লেগেছে। আমি শাওয়ার করে নামাজ পরে নিলাম। আমার ঘুম পাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে এখোনো আমার গায়ে সাইফুডিং এর বমি লেগে আছে! আমি আবারো শাওয়ার করলাম। সারা শরীরে বডি লোশন লাগাচ্ছি, সারাটা রুমে পারফিউম স্প্রে করেছি-কিন্ত বমির গন্ধ যাচ্ছে বলে মনে হয়না। আমি জানালার ভারী পর্দা সরিয়ে দিলাম, জানালা খুলে দিয়েছি। বাইরের বাতাস লেগে কিছুটা ভালো বোধ করছি।

সাইফুডিং আমার খুব বিশ্বস্ত অফিসার। আমি খুব স্নেহ করি-অনেকটা সন্তান কিম্বা ছোট ভাইয়েরমত। অফিসিয়াল কাজের বাইরেও আমার পার্সোনাল কাজগুলোও দেখাশুনা করে। আমার সাথে একবার সিঙ্গাপুরে যেয়ে ১৫ দিন হসপিটালে থেকেছে। আমার সেবা যত্ন করেছে-যা কারো ভাইও করে কিনা সন্দেহ। যেহেতু আমি সদ্য কেমোথেরাপী নিয়েছি-তাই আমার যাতে কোন অসুবিধা নাহয়-সেই জন্য আমার বৌয়ের আগ্রহেই ওকে এবারো সাথে নিয়ে চায়নাতে আসি। আমার বৌ বার বার বলে দিয়েছে-সাইফুদ্দিন, তুমি তোমার স্যারকে ঠিক মত ওষুধ খেতে মনে করিয়ে দেবে, যত্ন-আত্তি করবে, যেনো কোন অসুবিধা নাহয়। তোমার ঊপড় ভরসা করেই এই সময় তাঁকে দেশের বাইরে যেতে দিতে সাহস পেলাম আমার বৌ পার্সোনালি সাইফুডিং কে ২০০ ডলার দিয়েছে তার বৌ-বাচ্চার জন্য কেনা কাটা করার জন্য। আমিও ৫০০ ডলার দিয়েছিলাম।

ই সেই সাইফুডিং! এখন আমিই তার সেবা যত্ন করছি। নিজের রুম ছেড়ে বার বার তার রুমে এসে দেখছি কী অবস্থা! আমার টেনশনে শরীর কাঁপছে। যদি সাইফুডিং কে  হসপিটালে মুভ করতে হয়!! কাল জয়েস থাকবেনা। ঊইকেন্ড কাটাতে অন্য সিটিতে যাবে! যদিও টম ডিং থাকবে-আমাদের খোঁজ খবর নিতে। ইমারজেন্সী তাকে ডাকতে পারবো। আমাদের জন্য গাড়ী রেখে গিয়েছে ড্রাইভার সহ। আমাকে আরো বেশ কদিন চায়নাতে থাকতে হবে। আজ টমী-জিমী দুই জন চলে যাবে দেশে। ওদেরকে এয়ারপোর্ট পৌছে দিতে হবে রাত ৮ টায়। কাল অনেক কাজ আছে আমাদের। রাত ৮ টার ফ্লাইটে আমরা চলে যাবো নানজিং। এক ঘন্টার জার্নি সাংহাই-নানজিং। আমার খুব অস্থির লাগছে। আমি এতো কাজ কি ভাবে একা একা করবো! অনেক্ষন অজিফা পড়লাম। সাইফুডিং ঘুমাচ্ছে...। আমার রুমে ফিরে ফজর নামাজ পড়ে কিছু সময় ঘুমালাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন