মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

তারুণ্যঃ প্রাণের ছোঁয়া


তারুণ্যঃ প্রাণের ছোঁয়া

লিখেছেন বাবুয়া, সন্ধ্যা ০৬: ১৪, ০৮ জুন, ২০১১

তারুণ্যঃ প্রাণের ছোঁয়া

আজ বিভিন্ন দৈনিকে একটি খবর পড়ে খুব ভালো লেগেছে। আমাদের দেশেরই শেহাজদ নূর তাউস নামের এক তরুণ মাত্র ১৪ বছর বয়সে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পিএইচপি'র জেন্ড সনদ অর্জন করে বিশ্বজুড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে! সারা বিশ্বে পাঁচ হাজার এবং বাংলাদেশে ৩০ জনেরমত পিএইচপি জেন্ড সনদ প্রাপ্ত ব্যাক্তি আছেন। শেহাজদ নূর তাউস বিশ্বের সর্ব কনিষ্ঠ স্বীকৃত পিএইচপি সনদ অর্জনকারী। 

তারুণ্য মানেই এক নতুনের আহবান, সৃষ্টির উন্মাদনা। তারুণ্যের কাছে ঠিক এমনটিই প্রত্যাশা করা হয়। আর এ কারণেই নির্জীব তরুণ নয়, সমাজ প্রত্যাশা করে বড় জ্বল-জ্বলে স্নিগ্ধ গতিময় তারুণ্য। যে তারুণ্য লড়তে জানে গড়তে জানে। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে আমাদের সেই প্রত্যাশায় অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে। আর প্রশ্ন জমা হয়েছে বলেই আমরা সম্ভাবনার কথা বলি, সমস্যার শেকড় উপড়ে পথচলার দিকনির্দেশনা তৈরি করি।

আজকে আমাদের তারুণ্য নিয়ে আলোচনা আছে, সমালোচনা আছে। আছে সংশয়, ভয়, নির্ভয়। আছে সফলতা, ব্যর্থতা। সংশয় আর ভয়ের কারণ রয়েছে হাজারটা। তরুণদের এক বড় অংশ বিপর্যস্ত, বিপথগামী। যারা জীবনকে উড়িয়ে চলেছে নেশা আর মাদকের ধুপছায়ায়। নেশা বা মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা যে হু হু করে বাড়ছে তা নগরীতে প্রায় গাণিতিক আকারে বেড়ে ওঠা মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো দেখলেই বোঝা যায়। ক্লিনিকের সঙ্গে প্রায় পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠছে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র। হালে শুধু রাজধানীই নয়, মফস্বল শহরগুলোতেও মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের ছড়াছড়ি। এ থেকেই বোঝা যায় মাদকের ভয়াবহতা। অনেক পরিবারই ধ্বংশ হয়ে গেছে মাদকের ছোবলের কারণে। মা হেরে গেছে সন্তানের কাছে, বাবা মস্তক অবনত চিত্তে সব মানতে বাধ্য হয়েছে। এই নগরে এমন উদাহরণ শত শত , হাজার হাজার। তবে এর বিপরীতে আশার আলোও আছে, আছে সুখের সংবাদও। 

পত্রিকার পাতায় অথবা টেলিভিশনে এইচএসসি বা এসএসসিতে জিপিও ফাইভ অথবা গোল্ডেন পাওয়া তরুণ-তরুণীদের হাস্যজ্জ্বোল মুখগুলো দেখলে সত্যিই নিজের মাঝে অন্যরকম প্রণোদনা খুঁজে পাই। ভবিষ্যতের মানুষগুলোর সফলতায়, উচ্ছলতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলি। ভালো লাগে দারিদ্র্য জয় করা অদম্যদের গল্পও পড়ে বা শুনে। জীবনের সমান যুদ্ধ করেও যারা সফলতা হাত ছাড়া করেনি, বরং শত প্রতিকূলতার মাঝেও সফলতাকে মুঠোবন্দী করে সমাজের আয়েশী মানুষগুলোর কাছেও তারাও নির্মম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। আসলে এ সবই আমাদের জীবনের বা সমাজের এপীঠ বা ওপীঠের গল্প। কিন্তু ভয়ও হয়। আজকে যারা ভালো ফলাফল করে প্রাণছোঁয়া হাসি দিয়ে পরিবারকে মাতোয়ারা করছে তাদের অনেকেই আবার পরবর্তীতে পড়ে যাচ্ছে মাদক অথবা সমাজ সৃষ্ট কদাকার কোনো ফাঁদে। 

তবে এর বিপরীতে এখন পত্রিকার পাতা খুললেই কিছু সৃষ্টিশীল তরুণদের নতুন নতুন সৃষ্টির খবর চোখে পড়ে। এইতো আমাদের আরো এক তরুণ কদিন আগে ছুঁয়ে এল হিমালয়ের অরুনিমা। কী আশ্চর্য বছর কয়েক আগে এটা চিন্তাও করা যেত না। অথচ হিলারী আর তেনজিং-এর হিমালয় জয়ের গল্প শুনে একসময় আমরা রোমাঞ্চিত হতাম। আর এখন আমাদের তরুণরা সে পথেই ছুটে চলেছেন। এ রকম আরো অনেক ঘটনা আছে। মিডিয়াতে এখন আমাদের তরুণ সাংবাদিকরা অনেক সৃষ্টিশীল রিপোর্টিং করে নতুন এক ধারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। মিডিয়া এখন বড্ড গতিময় তরুণদের কারণেই। 

আসলে সময় এসেছে পরিবর্তনের। আবেগের কাছে পরাজিত না হয়ে কাজ করাটা এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে কাজ করতেই হবে। আর এ জন্যে নিজের মাঝে সবার আগে পরিবর্তন আনতে হবে। ভবিষ্যতের মানুষগুলোকে নিজের মাঝে পরিবর্তন না এনে উপায় নেই। সবাই মিলে ওদের জন্যে সুন্দর একটি পৃথিবী তৈরি করতে হবে। আমরা যদি সবাই যে যার অবস্থান থেকে ছোট ছোট উদ্যোগ, আয়োজন করি আমাদের তারুণ্য বদলাতে বাধ্য। হয়তো আমরা সবকিছু এক সঙ্গে পারব না, তবে যতটুকু পারব সেটাই বা কম কিসে। তারুণ্য বাঁচাতে আমাদের সবার সতর্ক হতে হবে। পরিবার থেকেই হতে হবে সবচেয়ে বেশি সতর্ক। সমাজকে বদলাতে হলে, তারুণ্যে থাকতে হবে প্রাণের ছোঁয়া। আসুন সবাই মিলে তারুণ্যে প্রাণের ছোঁয়া দিতে সচেষ্ট হই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন