সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

একজন অধূমপায়ীর তিক্ত বিড়ম্বনাঃ


একজন অধূমপায়ীর তিক্ত বিড়ম্বনাঃ

লিখেছেন বাবুয়া, দুপুর ১২: ২৬, ০৩ অক্টাবর, ২০১১

একজন অধূমপায়ীর তিক্ত বিড়ম্বনাঃ

২০০৬ সনে জাতীয় সংসদে যেদিন “"ধুমপান বিরোধী আইন-২০০৬"” পাশ হয়েছিল সেদিন খুব খুশী হয়েছিলাম। আমি খুশী হয়েছিলাম এই কারণে যে, আমরা একটি যুগোপযোগী আইন তৈরী করতে পেরেছি। আইনটি পাশ হবারপর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যনেলে দেখেছি- ভ্রাম্যমান আদালত কর্তিক হাতীরপোল, নিউমার্কেট, কাওরানবাজার, পুরনো ঢাকার কোর্ট চত্তর, সদরঘাট, কমলাপুর স্টেশন সহ বিভিন্ন যায়গায় ধুম্পায়ীদের ৫০ টাকা জড়িমানা করছে এবং ধুমপায়ীরা প্রকাশ্যে ধুম্পানের জন্য লজ্জা প্রকাশ করে মুচলেকাও দিয়েছিল। পৃথিবীর অনেক দেশে যখন আজ ধূমপান নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ১৫/১৬ কোটির এই বাংলাদেশে উক্ত আইনটি সৌভাগ্য বয়ে আনবে বলে আমার মনে হয়েছিল। কিন্তু হা হতোম্মী! কদিন পরেই ‘যথা পুর্বং তথা পরং’ অবস্থা!

ঈদের পর আমরা ইস্টিমার/রকেট যোগে ঢাকা থেকে খুলনা যাচ্ছিলাম। আমার সংগী ২ জন আমেরিকান, একজন জার্মান ও দুইজন চায়নীজ নাগরিকসহ মোট ৮ জন-যারা আমার ব্যবসার সাথে সংস্লিষ্ঠ। একটি ইন্ড্রাস্ট্রীর কাজে একনাগারে ৪ মাস কাজ করে সবাই হাপিয়ে উঠেছিল। তাই এদেরকে মূলত বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি-সুন্দরবন দেখাতে। টার্ন নামক স্টিমারের সুবিশাল লাউঞ্জে বসে অন্যান্য যাত্রীদের সাথে আমরাও আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ দেয়ালে ঠাসা একটি বাংলা-ইংরেজী পোষ্টার আমার নজর কাড়ল। "এটি একটি পাবলিক প্লেস, এখানে ধূমপান করবেন না"- সৌজন্যে বেক্সিমকো ফার্মা। মনটা বেশ প্রফুল্ল হয়ে উঠল। ভাবলাম জনসচেতনতা এবং জনসাধারণকে উক্ত আইন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করার জন্য একটি বেসরকারী কোম্পানী তাহলে সচেতন। মনে শক্তি অনুভব করলাম, যাকগে প্রতিবাদ করার একটা ভাষা অন্তত খুঁজে পাওয়া গেল। 

রকেট স্টিমার ছাড়ার কিছুক্ষণ পর আমার পাশের টেবিলে বসে দুই যুবক ধূমপান শুরু করলেন(এই দুই যুবক লাউঞ্জ ব্যবহারের জন্য বৈধ যাত্রী নন)। বেশ আয়েশ করে ধোঁয়া ছাড়ছিলেন দুজনেই। অন্য অনেক যাত্রীদেরমত আমারও পরিবেশ তখন বিষাক্ত মনে হলো। আমাদের সহযাত্রী বেশ কয়েকটি শিশু, নারীরা ছাড়াও আরো কিছু বিদেশীরা আছেন-যারা বিভিন্ন দাতা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তা এবং ট্যুরিস্ট। ওভাবে প্রকাশ্যে ধূমপান সকলের কাছে বিরক্তি ও অস্বস্তিকর মনে হচ্ছিল। আমি বললাম, "এক্সিউজ মি, এতজন মানুষের মাঝে আপনারা সিগারেট নাখেলে স্বস্তিদায়ক হবে”" এবং সামনের দেয়ালে সাটানো পোস্টারটা দেখালাম। আমার কথা শোনার পর লোকদুটা এমন ভঙ্গিতে তাকালেন যেন, এরকম কথা তারা জীবনেও শোনেননি। অতঃপর বিরক্তির ভঙ্গিতে বললেন, "শুদ্ধ কথা বাদদেন। আমরা আমাদের টাকায় সিগরেট কিনে খাই- আমরা সিগারেট খাব, অসুবিধাহলে আপনি বাইরে চলে যান"! আমি আবারও বিনীত ভাবে বলি- "আপনারা রেলিং’র কাছেগিয়ে সিগরেট খেলে, ধুঁমাটা বাতাসে বাইরে চলে যাবে- কারো অস্বস্তি হবেনা”"। ধূমপাতীদ্বয় আমার কথার ভ্রুক্ষেপ নাকরে সিগরেটে সুখটান দিয়েই চলছেন। অপমানে আমার মনটা খারাপ লাগল। মাথা ঠান্ডা রেখে ভদ্রলোকদের নতুন আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিলাম । কিন্তু আমার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বললেন "এই আইন মানি না, আমাদের দেশে আইন বলতে কিছু নেই, যারা আইন তৈরী করেছে তারা নিজেরাই জনসম্মুখে ধূমপান করছে, তাহলে অন্যরা করলে অসুবিধাটা কোথায়"? আমি তখন বেকায়দায় পড়ে গেলাম। এছাড়া সহযাত্রীদের ২/৩ জন যারা ধূমপায়ী ঐ লোকদের কথার সমর্থন দিয়ে আসছিল।

গতবছর ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’এ মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে ঘোষনা করেন-“"ধুমপান বিরোধী আইন ২০০৬"” কঠিন ভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক আইনের মতো এই আইনটিরও কোন কার্যকারিতা এখনো দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ এখনো "পাবলিক স্পেস" গুলোতে দেদারসে ধূমপান করে যাচ্ছে। আর এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় কষ্ট পাচ্ছে অধূমপায়ীরা। 

আসলে তাঁদের তো কোন দোষ নেই। আইনটি পাস হয়েছে আজ ৫ বছরের বেশী হতে চলল, অথচ আইনটি কার্যকর করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। দেশের ৮০% জনগণ এই আইন সম্পর্কে অজ্ঞ। গঠিত মনিটরিং টিম/সেলগুলো কাজ করছে না। এই আইনের প্রচারণাও থেমে রয়েছে। জানিনা- যারা অধূমপায়ী, তারা আর কতদিন ধূমপায়ীদের বিড়ম্বনা সহ্য করে যাব?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন