মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

নাগরিক যন্ত্রনা-কাক


নাগরিক যন্ত্রনা-কাক

লিখেছেন বাবুয়া, দুপুর ১২: ৪৭, ২৭ জুন, ২০১১


নাগরিক যন্ত্রনা-কাক

কাক'কে আমরা 'পাখি' হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কিছুটা কুন্ঠিত। অথচ কাক নগররের উপকারী একটি পাখি। নগরবাসীর উচ্ছিস্ট, পঁচাগলা প্রানী-এসব সাবার করে কাক নগরবাসীর প্রভুত কল্যাণ সাধন করে। আমরা নগরবাসীরা এখনো যে খুব দ্বায়িত্বশীল এবং আধুনিক মনা হয়েছি-তানয়। খাদ্যের উচ্ছিস্টাংশ, মাছ-মুরগীর বর্জ অনেক সময় ডাস্টবিনে নাফেলে মাল্টি স্টোরেড বিল্ডিং এর উপড়তলা থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে দেই। আমাদের সকলের ঘুম ভাংগার পুর্বেই কাক সেইসব উচ্ছিস্ট খেয়ে পরিবেশ সাফ-সুতরো করার দ্বায়িত্ব নিয়েছে। ফলে নগরীতে কাক আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটা পাখি। অথচ সেই কাকদের আমরা যথার্থ মুল্যায়ন পর্যন্ত করছিনা। তাচ্ছিল্য ভরে কাককে "কাউয়া" নামে ডাকি! আমাদের যেমন প্রয়োজন কাকদের, কাকেরো প্রয়োজন আমাদের। আমাদের প্রয়োজন মিটাতে ঢাকা মহানগরীতে কাকের কোন কমতি নেই। এই প্রয়োজনীয় কাক কিন্তু নগরবাসীর অনেক অনিস্টও করে, অনেক বেশি বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়।

যেমন ধরা যাক-কাক বিদ্যুতের তারের উপড় সারিবদ্ধ হয়ে বসতে পছন্দ করে। কাক এর শরিরের ওজনে, দমকা বাতাসে একটা তারের সাথে আর একটা তারের সংস্পর্শে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট ঘটে যায়। দুইএকটা কাক বিদ্যুতপৃস্ট হয়ে মারাও যায় এবং দ্রুম শব্দে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় এলাকার বিদ্যুত। তখন উপকারী কাক মরেছে কি বেঁচে আছে-সেখবর রাখিনা। এই আজই আমার এলাকায় কিছুক্ষণ পুর্বে এমন একটি ঘটনা কাক ঘটিয়েছিল। এমনিতেই দিনের ভিতর ৭/৮ বার বিদ্যুত চলে যায়। আজ কাকের কারনে সেই সমস্যা দীর্ঘায়ীত হয়েছিল। এভাবে বিদ্যুতায়ীত হয়ে একটি কাকের মৃত্যু হলে কোথা থেকে শত শত কাক ছুটে এসে অবিরাম কা-কা করে। কা-কা করা মানে কাকদের স্বজনের মৃত্যুতে আর্তচিতকার করা। কিন্তু কাকের স্মৃতিশক্তি খুব বেশী নয়-তাই বেশীক্ষণ এই শোক মাতম চলেনা। যার যার মত আবার খাদ্যের অন্বেষনে আবারো উড়ে চলে যায় অন্য কোথাও। বিদ্যুত চলেগেলে কাকের কোন ক্ষতিহয়না কিন্তু নগরবাসীর ভোগান্তির সীমা থাকেনা।

যেখানে নাগরিকেরা খুব বেশী সু-নাগরিক অর্থাৎ যারা রাস্তায়, ঘরের পাশে উচ্ছিস্ট আবর্জনা ফেলেনা-যেখানে আমাদের মত বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা নেই সেইসব নগরীতে কাকের আনাগোনা খুব বেশী রকমের কম। সেইসব শহরে অবশ্য কাকদের প্রবেশ নিষেধ। ঐসব উন্নত শহরে কাক ঢুকলেই নগররক্ষীরা ভয়দেখিয়ে কাকদের তাড়িয়ে দেয়। কারন সেখানে পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্য কাকের প্রয়োজন নেই। কাক বিদ্যুতের তারে শর্ট সার্কিট ঘটাতে পারে-সেই ভয়ে বনের কাকদের বনেই সুখ শান্তিতে থাকার জন্য প্ররচিত করা হয়। সেইজন্য ঐসব নগরীর অধিপতিরা শুধু নগরই গড়েননা; কাকদের বসবাসের জন্য অরণ্যও গড়ে তোলেন।

আমরা অরণ্য বিনাশ করে নগর গড়েছি বলে কাকরাও নাগরিক হয়েছে। কখনো কখনো তাদের আচরনেও নাগরিক মানসিকতার স্ফুরন দেখা যায়। সুখাদ্যের জন্য অনেক সময় কাক রান্নাঘর ভেদ করে খাবার চুরি করে উড়ে যায়। সন্তানের হাত থেকে খাবার ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। নাগরিকের মাছ, মাংশের টুকরা, শুটকি মাছ ইত্যাদি নিয়ে যায়। তখনো নগর মানুষের কাক'র দিকে তাকিয়ে হাহাকার করা ছারা কোন উপায় থাকেনা। তারপরও এই মহানগরীতে কাক আর মানুষ মিলেমিশে বসবাস করছি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন