মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

চল্ চল্ চল্’ রণসঙ্গীতের মহাশ্মশান বনাম গোরস্তান


চল্ চল্ চল্’ রণসঙ্গীতের মহাশ্মশান বনাম গোরস্তান

লিখেছেন বাবুয়া, দুপুর ০১: ৪৪, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

‘চল্ চল্ চল্’ রণসঙ্গীতের মহাশ্মশান বনাম গোরস্তান

ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী মুসলমানের মৃতদেহ শায়িত রাখা হয় গোরস্তানে, হিন্দু মৃতদেহ চিতায় ভস্ম করা হয় শ্মশানে। বিতর্ক হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল্ চল্ চল্’ রণসঙ্গীতের ‘গোরস্তান’ এবং ‘মহাশ্মশান’ শব্দ নিয়ে।

গোরস্তান মুসলমানের হলে হিন্দুর হবে শ্মশান, মহাশ্মশান হবে কেন? এখানে মহাশ্মশান শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সচেতন নজরুল সচেতনভাবেই মহাশ্মশান শব্দ ব্যবহার করেছিলেন তাঁর রচিত বিখ্যাত রণসঙ্গীতে। যে মহাশ্মশানে ভারতের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল।। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইংরেজ বা বৃটিশ রাজত্ব। নজরুল সেই মহাশ্মশানকে সজীব করতে চান। ‘তাজা-বতাজার’ গান গেয়ে হিন্দু-মুসলমানকে অতীত গৌরবে উজ্জীবিত করতে চান। বাহুতে নবীন বল সঞ্চয় করে ইংরেজ তাড়িয়ে ভারতের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে চান। এজন্য আহবান করেন ‘অরুণ প্রাতের তরুণ দলকে। হতে পারে এই মহাশ্মশান পলাশীর প্রান্তর অথবা পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের প্রান্তর। যেখানে দু’টি বীর গোষ্ঠী (হিন্দু-মুসলমান) আদিম জিঘাংসা নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। সুযোগ করে দিয়েছিল ইংরেজদের রাজ্য প্রতিষ্ঠায়।

তবে হ্যাঁ, একথা আজ ধ্রুব সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কি নজরুলের জীবদ্দশায়, কি জীবনান্তে চক্রান্ত চলেছে এবং চলছে তাঁর রচনার নানান বিকৃতির- কি শব্দে কি বাণী বিন্যাসে। নজরুল গবেষক শ্রদ্ধেয় শেখ দরবার আলম তাঁর দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায় "নজরুলের কবিতার আদি লেখা পান্ডুলিপি"র একটি লেখায় উদ্ধৃতিটির উল্লেখ করেছেন “তাজা-বতাজার” গাহিয়া গান’।। এখন হয়েছে ‘নব-নবীনের গাহিয়া গান’, ‘নতুনের গান’ শিরোনামের স্থান দখল করেছে ‘চল্ চল্ চল্’।

বর্তমানে নজরুলের লেখা কবিতা-গানের কিছু কিছু শব্দের সংস্কার করা হচ্ছে সচেতন ভাবে এবং তা বাংলা একাডেমীর তত্বাবধানেই। আমাদের দেশের একজন বিখ্যাত ব্যান্ড সংগীত শিল্পী(মাকসুদ) একটি রবীন্দ্র সংগীতের সুর বদল করে গান করেছিলেন। সেই অপরাধে সেই শিল্পীকে বয়কট করার জন্য রামেন্দু মজুমদার, কলিম শরাফীদের নেতৃত্বে কথিত সুশীল সমাজ প্রায় জাতীয় আন্দোলন করেছিলেন। অথচ, আমাদের "জাতীয় কবি" নজরুলের গানের, কবিতার বিকৃতি নিয়ে কারো কোনো প্রতিবাদ পর্যন্ত নেই! ‘নওবাহার’ পত্রিকার মত নজরুল কাব্যের শুদ্ধিকরণ কিংবা নজরুল কাব্যের পাকিস্তানি সংস্করণের মতো কোনো সংস্করণের চিন্তা যেন আর কোনোদিন না জাগে কারো মনে, আমরা যে কোনো মূল্যে নজরুল সাহিত্যকে অবিকৃত রাখবো এই হোক নজরুল সাহিত্যের প্রতি আমাদের অনুরাগের প্রথম অঙ্গীকার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন