সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

নিরাপদ জীবন চাই


নিরাপদ জীবন চাই

লিখেছেন বাবুয়া, বিকাল ০৫: ১১, ২৬ জুলাই, ২০১১

https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEivX887ZvOY0-k80Ko7tSpgXf2-Pi3YZHalqJgk4PvVEkfM6VutWjbD8Ubb8Gid4SYk14FdKueZTATjDRTZA3D3_a9IkGoY9BL4ut_Sh6O6vJTlbxt2oglCDieLEbqzirKfozoU-Fc156J-/s1600/Untitled-1+copy.jpg
নিরাপদ জীবন চাই
বিজ্ঞানীদেরমতে পৃথিবীর বয়স ৫০০ কোটি বছর আর মানুষের বয়স ১০ লাখ বছর পার হয়ে মানুষ আজ সমাজবদ্ধ জীব। এখন মানুষ আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নতির শিখরে। এত উন্নতির পাশাপাশি যখন মানুষের বর্বরোচিত ঘটনা দেখি তখন ব্যথা পাই, বিস্মিত হই এই ভেবে যে, কেন এই মানবিক অবক্ষয়? কী কারণে এত বর্বরোচিত ঘটনা ঘটানো সম্ভব মানুষের দ্বারা? সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা যাক।

গত কয়েকমাস আগে পত্রিকায় পড়েছি- সাভারের একটি ইটভাটা থেকে ৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়, কাজ করানোর পরে শিকল দিয়ে যাদের বেঁধে রাখা হতো, তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। তাদের ভালোভাবে খেতে পর্যন্ত দেয়া হতো না। উদ্ধারকারীদের মধ্যে আট বছর থেকে ৫০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত রয়েছে। উত্তরাঞ্চল, সাতক্ষীরা ও খুলনা, ঝালকাঠী, পার্বত্যাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দালালেরা এদের এনে ঐ ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেয়। ৮ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর খুনিরা আবুল কাশেমকে খুন করেছে। আবুল কাশেমের বাবা ইসহাক মোলস্নাকেও ২০০১ সালে খুন করা হয়। বাবার খুনের বিচার হয়নি, তাই পিতার মতো জীবন দিতে হলো আবুল কাশেমকে। ৮ জানুয়ারি দিনে দুপুরে রাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় এক বাসায় ঢুকে বিভূতিভূষণ রঞ্জনকে হত্যার চেষ্টাকালে তাঁর শিশুপুত্র শুভ দেখে ফেললে তাকে হত্যা করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে শিশুটির মৃত্যু ঘটে। পিতা বেঁচে যান। মাত্র কয়েকদিন আগে পবিত্র শব ই বরাতের রাতে ঢাকার আমিন বাজারে ৬ জন কলেজ ছাত্রকে নির্মম ভাবে প্রান দিতে হয়েছে গ্রামবাসীদের হাতে। 

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন 'অধিকার' ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে এক রিপোর্টে জানিয়েছে, দেশে ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। এর সঙ্গে বাড়তি যগ হয়েছে গুম ও মানুষকে নিখোঁজ করার প্রবণতা। ২০১০ সালে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতেই ১৪৭ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়, ক্রসফায়ারে ১১২ জন, ২৬ জনকে নির্যাতন, ১২ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৬৮ জন র‍্যাবের হাতে, ৪৩ জন পুলিশে হাতে এবং র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ১৪ জন নিহত হয়েছে। গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩৪ জন নিহত, আহত হয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৯ জন। গণপিটুনিতে ১৯৪ জন নিহত। হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কেন এই হত্যাকাণ্ড?

পত্রিকায় পড়েছি- উখিয়া থানার পুলিশ শিকল বেড়ি পরানো অবস্থায় রিমা নামের এক কাজের মেয়েকে উদ্ধার করেছে। পালং ইউনিয়নে হরিণনামা গ্রামের হতদরিদ্র নজির আহমেদের কন্যা রিমা আক্তার কাজল (১২)। পালং ইউনিয়নের খোন্দকার পাড়া গ্রামের এক বাড়িতে কাজ করতো সে। কাজের চাপ সইতে না পেরে কিশোরী বাড়িতে চলে যায়। পরে তাকে গৃহকর্তা আবার বুঝিয়ে নিয়ে এসে কেয়ারটেকারকে দিয়ে রিমার পায়ে শিকল পরিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। এ ব্যাপারে রিমার মা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। ১৯ এপ্রিল উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোসলেম গাইনের পুত্র সাইফুল ইসলাম একই উপজেলার আটমাইল দেনার গ্রামের নওশের বিশ্বাসের কন্যা রুকসানা খাতুনকে পছন্দ করে বিয়ে করে। সন্তানসম্ভবা হলে তাকে সন্তান নষ্ট করতে চাপ দিতে থাকে এবং তাকে বলা হয় সন্তান না নষ্ট করলে এক লাখ টাকা এনে দিতে হবে। এ ঘটনার পরে কৌশলে তার সন্তান নষ্ট করা হয়। সন্তান নষ্ট হওয়ার পরে তার স্বামী তাকে তালাক দেয়। পর পর দুটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়, আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে এ দুটি ঘটনা ঘটেছে। এর চেয়েও চরম ৯ ফেব্রুয়ারি শরিয়তপুরের নরিয়া উপজেলার চামটা গ্রামের হেনার ঘটনা। হেনা (১৪)-কে দোররা মেরে হত্যা করেছে ফতোয়াপ্রদানকারীরা। হেনা ধর্ষিত হওয়ার পর তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হলো, তারা তাকে দাররা মেরে শেষপর্যন্ত মেরেই ফেললো। দর্শকরা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলোথ কেউ নিরাপরাধ এই কিশোরীর প্রতি এই অবিচারের প্রতিবাদ পর্যন্ত করলো না। চারদিকে এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনে আতঙ্কই বাড়ায় না এসব মানুষের প্রতি ঘৃণার জন্ম দেয়, যা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা হয়ে কাজ করে। 

দেশ জুড়ে ক্ষমতাসীন দলের পান্ডাদের হাতে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান দেয়ার কোনোই দরকার নেই-যা দেশের মানুষ প্রতিদিনই মিডিয়ার কল্যাণে জানছে এবং দেখছে। তবে বর্তমানে নতুন মাত্রা পেয়েছে দেশের সর্বত্রই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নামধারী কিছু অমানুষের অকথ্য অসভ্যতামীর বিষয়।

সন্ত্রাস, নির্মমতা আর অমানবিকতার শেষ সংজোযন মহামান্য রাস্ট্রপতির "মহানূভবতা"য় খুনীদের সাত খুন মাপের মহতসব! অন্যায়কারীরা যুগে যুগে তাদের কালো হাত প্রসারিত করে রাখে, যার মুষ্ঠিতে আবদ্ধ হয়ে নিরীহ মানুষের জীবন, মান-সম্মান ধুলায় মিলিয়ে যাচ্ছে। যার খবর ক'টিইবা হয় গণমাধ্যমে। আমরা এ সমাজে ঘটে যাওয়া প্রতিটি অস্বাভাবিক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই, সমাজ তথা পরিবারে সুষ্ঠু স্বাভাবিক অবস্থায় বাঁচতে চাই। রাস্ট্র যন্ত্রের ছত্রছায়ায় খুনীদের আশ্রয় প্রস্রয় দেয়ার "ঘৃনিত মহানূভবতা" থেকে রক্ষা চাই। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন