মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মুক্তিযুদ্ধঃ কি চেয়েছি, কি পেয়েছি!


মুক্তিযুদ্ধঃ কি চেয়েছি, কি পেয়েছি!

লিখেছেন বাবুয়া, রাত ০৯: ১৭, ১৯ মার্চ, ২০১১

মুক্তিযুদ্ধঃ কি চেয়েছি, কি পেয়েছি!

১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাস রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের যাবতীয় নির্মমতার মধ্যে দিয়ে আমরা একটি নতুন দেশ পেয়েছি।আমরা দেশ পেয়েছি, পতাকা পেয়েছি, জাতীয় সঙ্গীত পেয়েছি, জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়েছি। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন, সার্বভৌম একটি দেশ। বাংলাদেশী বাঙালি জাতিসত্তার একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যার ফলে, বিশ্বের কাছে আমাদের বাংলা ভাষা ও জাতিসত্তা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।জাতিসংঘে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি। আমাদের আরো প্রাপ্তি হলো স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে একটি দেশের ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছি। গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে এবং আমাদের কছু সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড আছে। যার ফলে আমাদের সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি একটি অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছি।

আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, ভৌগোলিক সীমানার অভ্যন্তরে সার্বভৌমও পেয়েছি(যদিও সংবিধান বিরোধী তথাকথিত ‘শান্তি চুক্তি’র আওতায় স্বার্বভৌমত্ব যায়যায় করছে), নিজেদের মতো করে রাজনীতি করার অধিকার এবং সুযোগ পেয়েছি(এখন এই অধিকার শুধু শাসক দলেরই আছে); দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে অবহেলা করে দল কেন্দ্রিক ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের লাগামহীন স্বাধীনতা(!)পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি-কিন্তু সাধারন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা এখন রুদ্ধ। এর জন্যে আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে এং আরো অনেক মূল্য দিতে হবে। 

যা আমরা পাইনি তা যদি সরাসরি বলি-তার অর্থ হলো একটি সুসংগঠিত রাষ্ট্র আজও পাইনি। আমরা সাধারণভাবে জনগনের রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা হলো ব্রিটিশ আমলের ব্যবস্থা থেকেও কয়েক ধাপ পিছিয়ে, যার জন্য আমরা পাকিস্তানের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেশি দূর এগোতে পারিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কতগুলো জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছি, যেমন স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা, সম অধিকারের নুন্যতম নিশ্চয়তা। সে জন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা দুর্বল করেছি, বিকৃত করেছি। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা চলে জাতীয় সংসদকে আমরা নুন্যতম কার্যকর করতে পারিনি। আরও কিছু গুরুত্বপুর্ণ সুযোগ সেগুলো কাজে না লাগাতে পারায় মানুষের কল্যাণকর অনেক কিছুই করতে ব্যার্থ হয়েছি। যেমন, রাজনীতিবিদদের সুস্থ্য রাজনীতি নাকরা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করা,এক দলীয় গণতন্ত্র কায়েম করা, বিশাল যুবসমাজকে যথাযথ ব্যাবহার করতে নাপেরে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে একটা আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চরম ব্যার্থতা।


আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতোদিনেও উন্নত হয়নি। ছাত্র সংখ্যা,পাশের সংখ্যা অবশ্য বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান আশানুরূপ হয়নি। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ, মানবিক-মানষিক মুক্তিতো আজও পাইনি। আমরা কিছু কিছু পশ্চাৎপদ ধারণা লালন করি যার ফলে দেশে দারিদ্র্য এবং অসহায়দের দুঃখ-দুর্দশা আরও বেড়েছে। এর অভিশাপ থেকে কবে মুক্তি পাবো জানি না।স্বধীন বিচার ব্যাবস্থার নামে যা পেয়ছি তাশধু লজ্জা জনকই না-অত্যন্ত ঘৃণা আর উপহাসের বিষয়! আমরা চেয়েছিলাম সত্যিকারের গণতন্ত্র এবং মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। যেখানে ঘটবে অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তি-কিন্তু এগুলো আমরা আদৌ পাইনি। আমাদের মাথা-পিছু গড় আয় হয়তো বেড়েছে কিন্তু সেই আয়ে কি সৎ ভাবে জীবন যাপন সম্ভব?

কি পাইনি বললে আরো বলতে হয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ আন্তরিকতা, আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ দক্ষতা, সামাজিক নেতৃত্বের উন্নয়নমুখী দৃঢ়তা এবং ব্যবসায়ীক নেতৃত্বের সাহসী সততা। আরও কি পাইনি, তার তালিকা অতি দীর্ঘ কেবল দু’একটি মাত্র উল্লেখ করতে চাই। পৃথিবীর বুকে আরও দশটা দেশের নাগরিকদের মতো ‘বাংলাদেশী’ হিসেবে সম্মান পাইনি, মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় গঠনমূলক সম্মান পায়নি, দারিদ্রতা ধনীদের আন্তরিক সহমর্মীতা পায়নি যার ফলশ্রুতিতে পাইনি বলিষ্ঠ জাতীয় নেতৃত্ব। যেটা এত দুঃখের মধ্যে পেয়েও গর্বিত থাকি সেটা হচ্ছে একটি গণমুখী, উন্নয়নমুখী, শৃংখলামুখী, সংবিধানমুখী সামরিক বাহিনী(যদিও এখন এবিষয়েও সাধারন মানুষের মনে দ্বিধা দন্দের অবকাশ আছে)।পাইনি বুদ্ধিজীবী মহলের দেশ গঠনমূলক সমালোচনা ভিত্তিক মমত্ব। পেয়েছি সুবিধাবাদী মিডিয়া, পাইনি দেশ ও জাতি গঠনমূলক একতাবদ্ধ মিডিয়া। পেয়েছি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, পাইনি ঐতিহ্য রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার।

আমাদের রাজনীতি যেন স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হয়। রাজনীতি যদি স্বাধীনতাকে আত্মীকরণ করতে না পারে, তবে সে রাজনীতি জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। বরং এক্ষেত্রে জাতীয় সংকট তৈরি হয়, জাতিসত্তার সংকট তৈরি হয়। স্বাধীনতার অন্তর্গত শক্তি ও আবেদন যেন আমাদের সব সময় উজ্জীবিত করে, অনুপ্রাণিত করে এবং আমরা যেন জাতিগঠনে উদ্বুদ্ধ হই। মুক্তিযুদ্ধ যেন সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রতীক হিসাবে কাজ করে। রাজনীতির নানা মত ও পথ, বিরোধ ও ঐক্য যেন স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী না হয়। স্বাধীনতার চেতনা, ত্যাগ, আগুন ও অশ্রুপাত, ইস্পাতদৃঢ় প্রতিজ্ঞা যেন আমাদের দেশ গড়ার কাজে এক এবং একাকার হয়ে যায়। আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব যেন কোনোভাবেই বিপন্ন না হয়। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা যেন আমাদের রাজনীতি , অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে। জাতীয় প্রেরণার অবিনাশী উৎস স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার চেতনা থেকে আমরা যেন বিচু্যত না হই।

পেয়েছি যুদ্ধ বিজয়, পাইনি বিজয়কে অর্থবহ করার দৃঢ় নেতৃত্ব আর সামাজিক-রাস্ট্রীয় অঙ্গীকার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন