সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আমাদের বদ মানষিকতা


আমাদের বদ মানষিকতা 

কোন্ জাতি কতটা সভ্য তা তাদের সংস্কৃতি থেকে বোঝা যায়। সংস্কৃতি মানুষের অভ্যাস, চিন্তাধারা, আচার-আচরণ ইত্যাদিকে ধারণ করে। যে জাতির আচার-আচরণ সংযত ও বিনীত সে জাতি সকলের কাছে সম্মানীয়। মানুষ শিক্ষা গ্রহণের সংস্কৃতির মাধ্যমে তার মন্দ আচরণগুলোকে পরিবর্তন করে সভ্যতার দিকে এগিয়ে গিয়েছে। ভালো জিনিসগুলোকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছে। সভ্যতার সেই হাজার বছরের ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের অতীতও গৌরবের। আমরা আমাদের মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছি। প্রতিনিয়ত আমরা ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখনও কিছু কিছু তুচ্ছ আচরণ আমাদের মধ্যে দেখা যায়, যা কিনা জাতি হিসেবে অন্যদের কাছে আমাদের মাথা হেঁট করে দেয়। একটু সচেতন হলেই আমরা আমাদের এসব খারাপ আচরণ পরিত্যাগ করতে পারি।

যেসব হীন তুচ্ছ আচরণ আমাদের সমাজে বিরাজমান, তার মধ্যে একটি হলো টাকা/ নোটের ওপর লেখা। আমাদেরদেশে কেউ কেউ টাকার ওপর অকথা-কুকথা লিখে, নাম-ঠিকানা লিখে চিঠি দেয়ার, ফোন করার অনুরোধ জানায়!তাতে কেউ সফল হয় কিনা জানিনা-কিন্তু তাতে সামাজিক বিড়ম্বনা বাড়ে, আমাদের অজ্ঞতা ও অসচেতন তা প্রমাণিত হয়। নোট ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষিত-অশিক্ষিত অনেকের মাঝেই এই অসচেতনতা লক্ষ করা যায়। টাকা মুচড়িয়ে কান খোঁচানো, ভাঁজ করে ট্যাবলেট বানানো,নোটের উপর বিভিন্ন রঙের কালিতে লেখালেখিকে আমরা কিছুই মনে করি না। নোটের উপর লেখালেখিতে ব্যাংকারর্সরাও কম যাননা। মাছের বাজারে গেলে তো টাকার স্বাভাবিক অবস্থার দফা-রফা হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা নোট আমাদের দেশে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, নোংরা নোটগুলো বিভিন্ন হাতে যাওয়া-আসার ফলে অসুখ-বিসুখ ছড়ায় যাতে শিশুদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়াও পাবলিক টয়লেট/বাথরুম, লঞ্চ-বাস-ট্রেনের সিটে, স্কুল-কলেজের বাথরুমে আজেবাজে কথা লেখার কুঅভ্যাস থাকায় পরিবারে ও সমাজে অনেক সময় আমাদেরকে লজ্জার মধ্যে পড়তে হয়।

সব পুর্ব অভিজ্ঞতা অতিক্রম করে এবার এমিরেটস ফ্লাইটে এক “বিদ্যার্থীর বিদ্যার কুচর্চা” দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমাদের ফ্লাইট রুট লন্ডন-দুবাই-ঢাকা। আমি কখনও জার্ণীতে ঘুমাইনা-তা যত লম্বা জার্ণীই হোক।লন্ডন হয়ে আমরা দুবাই এয়ারপোর্টে আ্দেমার ৫০ মিঃ যাত্রা বিরতি দিয়ে ঢাকার পথে ঘন্টাখানেক আকাশে ওড়ারপর আমার দুই সারি সামনের সীটের এক বৃটিশ(হোয়াইট) যাত্রী ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এয়ার হোস্টেসের মাধ্যম সিনিয়র পার্সারকে কল দেন। কি যেনো বলেছেন-আমি পিছন থেকে বুঝতে পারিনি-কিন্তু যাত্রীকে খুবই বিরক্ত এবং পার্সার বারবার স্যরি বলার দৃশ্যটা বুঝতে পেরেছিলাম। দুই বৃটিশ ভদ্র লোকের সাথে আরো বিভিন্ন বয়সের ১৯/২০ জন ইয়াং লেডি টীম। ওদের গন্তব্য ঢাকা হয়ে নেপালের কাঠমুন্ডু ।পরে জেনেছি-ওরা ইউকে মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব এর সদস্য।

পার্সার এবং ফ্লাইট সিকিউরিটি সার্জেন্ট(সার্জেন্ট য়্যাট আর্মস) ক্যামেরা নিয়ে ওয়াশরুম ২/৩ বার ভিজিট করে আবার চীপ পার্সার বৃটিশ যাত্রীর নিকট স্যরি বলেন। পার্সার চলে যাবারপর জার্মান ফ্লাইট ক্যাপ্টেন এসে সেই যাত্রীসহ সকল যাত্রীদের কাছে স্যরি বলেন-কেউ একজন ওয়াশরুমে নোংরা কিছু লেখার জন্য। আমরা এতক্ষনে বুঝতে পারি-বিষয়টা কি! 

ক্যাপ্টেন এর নির্দেশে ফ্লাইট সিকিউরিটি সার্জেন্ট য়্যাট আর্মস এনাউন্স করেন-যিনি ওয়াশরুমে নোংরা কিছু লেখার জন্য দায়ী ১০ মিনিটের মধ্যে দাঁড়িয়ে স্যরি বলার জন্য। আমি পার্সারকে জানতে চাই-কী সমস্যা? পার্সার জানালেন-“ Some one perverted passenger invited sexy girls with drawing his and opposit organ along with describing his performance on the toilet’s wall by marker pen. We already spot him who did this nasty work”(হুবহু পার্সারের বক্তব্যটাই লিখলাম). আমার পাশের সীটে আমার কলেজ পড়ুয়া ছেলে ঘুমাচ্ছে। 

আমরা যখন হীথ্রো থেকে দূবাই ফ্লাই করি-তখন ১৫/২০ টি সীট খালি ছিল, দূবাইতে দেড়শতাধিক যাত্রী ডিপার্সার হয়-যাদের বেশীর ভাগই ইয়োরোপীয়ান ও এরাবিয়ান। দুবাই থেকে এরাইভেল প্যাসেঞ্জার সবাই বাংলাদেশী। এবার কোনো সীট খালিছিলনা-যা আমি লক্ষ করেছি।

কেউ স্যরি বলেনি। মিনিট পনেরোর মাথায় সার্জেন্ট য়্যাট আর্মস আমার ডান সারির একজন ইয়াং যাত্রীকে দাড়াতে বলেন। তখন আমি বুঝিনি-কি ভাবে ঐ যাত্রীকে শনাক্ত করা হয়েছিল।পরে জানতে পারি-“অপরাধী তার অপরাধের পদচিনহ রেখে যায়”-এই সত্য এখানেও কথিত অপরাধী প্রতিষ্ঠিত করে যায় নিজ ইমেইল আইডি লিখে! 

এমিরেটস কর্তিপক্ষ ঐ যাত্রীকে পুলিশে দেবার সিদ্ধান্ত নিলে যাত্রীটি সকলের সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করে বাকী ৪ ঘন্টার জার্ণী চাদর মুড়ি দিয়ে কাটিয়েছিলেন! যাত্রীটির বাড়ি দেশের পূর্বাঞ্চলীয় একটি জেলায়। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং জয়েন্ট সিটিজেনশীপ ক্যারীয়ার। 
যেহেতু সকল যাত্রীদের পার্সোনাল কন্ট্রাক্ট ইনফর্মেশন প্যাসেঞ্জার লিস্টে চীফ পার্সারের নিকট থাকে-সেখান থেকেই সার্জেন্ট য়্যাট আর্মস অসভ্য যাত্রীর ফোন নম্বরসহ বিস্তারিত ফাইন্ড আউট করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন