মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইতিহাস

লিখেছেন বাবুয়া, রাত ১০: ১৫, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইতিহাস

ব্রিটিশ শাসন আমলের পূর্বে ভারতবর্ষ প্রায় সাড়ে পাঁচশ' বছর মুসলিম শাসনামলে ছিল। এ সময় ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন শিল্পশৈলীসহ মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন শত শত মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তেমনি পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণশৈলী, কারুকার্য ও নান্দনিকতায় মসজিদটি অনন্য। মসজিদটির তিন দিকে রয়েছে খোলা প্রাঙ্গণ। মসজিদের পিছনের দিকে রয়েছে সবুজের সমারোহ বৃক্ষারাজি দ্বারা আচ্ছাদিত। মসজিদে ওজুখানার ব্যবস্থাটিও চমৎকার।

মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর: তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.ওসমান গনি ও অন্যান্য প্রফেসরের উপস্থিতিতে ১৯৬৬ সালের ২০ ডিসেম্বর মসজিদটির ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ মসজিদটি পবিত্র রমজান মাসের এক শুক্রবার উদ্বোধনের পর মাগরিবের নামাজ আদায় করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি মসজিদের মধ্যে এটি সেন্ট্রাল। ৫ বিঘা জমির ওপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত।

মসজিদে দু'টি মিনার, ভিতরে রয়েছে গোলাকার বেশ কিছু পিলার, কারুকার্য খজিত দরজা-জানালা, ঝাড়বাতি নয়টি, আলমারি ২টি। আলমারিতে রয়েছে কোরআন-হাদিসের প্রায় দু'শ অমুল্য বই। মসজিদের ভিতরে ২৩ লাইন (কাতার)এ নামাজে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি কাতারে ৭৫-৮০ জন মুসুল্লী দাঁড়াতে পারেন। এছাড়া মসজিদের বারান্দার অংশে রয়েছে আরো ১০টি কাতার। সেখানেও প্রতি কাতারে ৭৫-৮০ জন দাঁড়াতে পারে। প্রতি শুক্রবার মসজিদে প্রায় আড়াই হাজার মুসলিস্নর সমাগম হয়।

আমল ও শিক্ষাদান: মুয়াজ্জিন মাওলানা মোঃ শাহ আলম জানিয়েছেন, সপ্তাহে ছয়দিন বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বাচ্চাদের ফ্রি কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। শুক্রবার বাদ আছর তাবলীগ জামায়াতের বয়ান(গাস্ত) হয়। এছাড়া তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষক-ছাত্রদের সমন্বয়ে রবিবার বাদআছর থেকে মাগরিব এই মসজিদে পর্যালোচনা মুলক আলোচনা হয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজার: "মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই। যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই"-বিদ্রহী কবি আশা করেছিলেন-তাঁর কবরের পাশ দিয়ে নামাজী ভাইয়েরা যাবেন, পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি তিনি কবরে শুয়ে শুনতে পাবেন।তাতেই তাঁর কবর আজাব থেকে রেহাই পাবেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের কথাগুলো যেন আল্লাহ কবুল করেছেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়েছে। মসজিদের পাশে আরো কবর দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড.ওসমান গনি, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, চারুকলার শিক্ষক কামরুল হাসানসহ স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের। যার কারণে গোটা দেশের মানুষ এই মসজিদটি সম্পর্কে ভিন্ন রকম আকর্ষণ অনুভব করে থাকে।

বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন ড.শমসের আলী, ড.আমিনুল ইসলাম, সৈয়দ আহমদ খান, ডএবিএম হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ড.শহীদ উদ্দিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। দিন দিন মুসলিস্নদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। শুক্রবার ও ঈদে মুসলিস্নদের সমাগম বেশি ঘটে। ফলে রাস্তায় নামাজ পড়তে হয়। কার পার্কিং-এর জায়গা নেই। মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করা খুবই জরুরি।

আমি কথা বলি-মসজিদের সদস্য সচিব ও খতিব হাফেজ মাওলানা খলিলুর রহমান সাহেবের সাথে। তিনি বলেন-"আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমি ১৯৭৭ সাল থেকে এ মসজিদের খতিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার সৌভাগ্য যে,আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব হতে পেরেছি। এ মসজিদের মুসুল্লিরা অনেক উচ্চ শিক্ষিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারী আমার মসজিদের মুসুল্লী।

ইমাম হাফেজ মাওলানা নাজির মাহমুদ বলেন-"আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এ মসজিদের ইমাম হতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী ছাত্র ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কৌতুহলী মুসলমানগণ এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। মসজিদের খাদেম আব্দুল মালেক, শফিউল্লাহ শিকদার ও মোঃ তারা মিয়া দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের খাদেমের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি অন্যান্য মসজিদ থেকে অসম্পূর্ণ আলাদা। এটা আমাদের চেতনার প্রতীক।এ মসজিদের সাথে এ দেশের অনেক ইতিহাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ মসজিদ '৬৯'র গণঅভু্যত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যাক্তিত্ব ড.মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদটি এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী, শহীদ মিনার, শিশু পার্ক ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজারসহ নানান স্থাপত্য রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। আমাদের লক্ষ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় একটি মসজিদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা। যাতে বিভিন্ন দেশের কৌতুহলী মানুষ মসজিদটি পরিদর্শনে আসেন। আমরা ছয় তলাবিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ জন্য আমরা মসজিদের নান্দনিক ডিজাইন আহবান করছি। বিভিন্ন ডিজাইনার ডিজাইন করছে। ডিজাইন বাছাই সম্পন্ন হলে সরকার ও বিদেশীদের কাছে মসজিদ নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করা হবে। ইতিমধ্যে এ মসজিদটি নির্মাণের ব্যাপারে সৌদি ও ইরান সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বর্তমান কমিটি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী: মসজিদ পরিচালনার জন্য রয়েছে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নিবেদিতপ্রাণ কমিটি। কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণী। সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড.মিজানুর রহমান, সদস্য সচিব- মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা খলিলুর রহমান, সদস্য- চীফ ইঞ্জিনিয়ার আমির হোসেন, ডঃইউসুফ, আশরাফ উদ্দিন ভুঁইয়া, পরিচালক,হিসাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন