মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মানুষ ও মানবিক মূল্যবোধ


মানুষ ও মানবিক মূল্যবোধ

লিখেছেন বাবুয়া, রাত ০৮: ১৫, ০৫ জুলাই, ২০১১

  

মানুষ ও মানবিক মূল্যবোধ


প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর তারুণ্য দেখলে কার না ভালো লাগে। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ই হচ্ছে যৌবন। যে দেশ যে জাতির যৌবন ঝলমলে তার ভবিষ্যৎ ততই উজ্জ্বল। আমরা জন্মেছি উন্নয়নশীল নামের দরিদ্র দেশে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সমাজ। লাগেনি আধুনিকায়নের হাওয়া, ছিল না প্রযুক্তি আর বিলাসের অবাধ উপকরণ। তারপরও আমাদের শৈশব-কৈশোর- যৌবন কেটেছে উত্থান-পতনের অনাবিল আনন্দে। চেতনা ও আদর্শবোধ যে কথার কথা নয়, সেগুলোর ধার যে পরীক্ষিত তাও দেখেছি আমরা। একদিকে স্বদেশ পাবার আকুলতা অন্যদিকে বৈরী শাসন। স্বাধীন দেশেও কত বিপর্যয়, কত অঘটন তবু উচ্ছলতায় ছেদ পড়েনি। মানবিক ও নৈতিক দীপ্তিতে তারুণ্য হয়েছিল আশার প্রতীক।


জীবন খুব সুন্দর। এই সুন্দর জীবন মানুষ একবারই পায় উপভোগ করার জন্য। কিন্তু এ দেশে এ সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা এ জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, যারা নিজেরাও ভালো থাকে না, নিজের জীবনটাকে ধ্বংস করে সেইসঙ্গে অন্যজনকেও নষ্ট করে। ভালো কিছুর মধ্যে থেকেও যারা বিষাক্ত কীটে পরিণত হয়, যে কীট শুধু বিষ ছড়াতে পারে। যার ফলে প্রতিদিনই আমরা পড়ছি, জানতে পারছি-মানবিক মুল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের ভয়াবহ সংবাদ। গত কয়েকদিন যাবত দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ভিকারুন্নেসা স্কুলের কয়েকজন ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটিয়েছে ঐ স্কুলেরই সশিক্ষক নামধারী কয়েকজন নরপশু!অন্যদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী কিছু ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কীভাবে বজায় রাখছে এবং কীভাবে নৃশংসভাবে ছাত্র খুন করছে!এমন নসংশতা শুধু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরমধ্যেই থেকে নেই, কোমলমতি স্কুল ছাত্রদের মধ্যেও লক্ষ করা যাচ্ছে! যাদের হাতে খাতা-কলম, বই থাকার কথা তারা কথায় কথায় অস্ত্র তুলে নিচ্ছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এদেশের তরুণ সমাজ ও ছাত্ররা যখন দেশকে বাঁচাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল সেই ইতিহাস আজও আমাদের জাতীয় গর্বের বিষয়।সত্যিই অবাক হতে হয়, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের তরুণ সমাজের মানবিক মূল্যবোধ ও আজকের তরুণ সমাজের মানবিক মূল্যবোধের পার্থক্য দেখে।মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে আজ ইভটিজিং-এর কারণে ঘটছে আত্মহত্যা ও হত্যার ঘটনা। এই সমাজে অ্যাসিড সন্ত্রাস, যৌতুক, ধর্ষণ, অপহরণ ঘটে চলেছে নির্বিঘ্নে। দু-এক দিন এসব ঘটনা নিয়ে মাতামাতি চলে। তারপর আবার নতুন কোনো ঘটনার জন্ম হয়। এর শেষ কোথায় কে জানে?


দিন দিন যেভাবে মানুষের মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে তাতে করে ভবিষ্যতে এদেশের মানুষের ওপর কী ধরনের বিপর্যয় ঘটবে তা বলা কঠিন এবং তা চিন্তা করলেও আতঙ্কিত হতে হয়! যে রোগগুলো এ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে তা আমরা জানি। এর প্রতিকারের জন্য যে ওষুধ দরকার তাও বোধহয় আমাদের অজানা নয়। শুধু আমাদের মধ্যে সেই সুদক্ষ ডাক্তার নেই, যিনি এটার সঠিক মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করে এই রোগগুলোকে নির্মুল করতে পারেন। যতোই দিন যাচ্ছে সমাজের কিছু মানুষ যেন আরো বেশি অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর যার প্রভাব পড়ছে গোটা দেশবাসীর ওপর। তাই সময় এসেছে আমাদের সামাজিক, নাগরিক ও জাতীয় জীবনে মানবিক মূল্যবোধগুলোকে জাগিয়ে তোলার, আত্মসচেতন করে তোলার। মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও চেতনার মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলার। আর এটাই পারে ব্যক্তি থেকে,পরিবার থেকে,সমাজ থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে সমস্ত সহিংসতা দূর করতে। এজন্য সমাজের প্রতিটি সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।এবিষয়ে অন্যান্য মিডিয়ারমতো ভার্সুয়াল মিডিয়াও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন