হাইকোর্ট মাজার
সুলতানুল হিন্দ খাজে খাজাগান গরিব-ই-নেওয়াজ
হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্তি (র.) ৫৩৬ হিজরিতে পারস্যের সিস্তান প্রদেশের সানজা নগরে
জন্মগ্রহণ করেন।
হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্তি (র.) ৫৬১
হিজরি সনে আজমির গিয়ে আস্তানা স্থাপন করেন এবং সেখানে একটি মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাচীণ পাক-ভারত
উপমহাদেশে যিনি ইসলাম প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি সাধককুলের শিরোমণি
ও চিশ্তিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা। মুঘল সম্রাট আকবর তাঁকে ‘আফতাব-ই-হিন্দ’ বা 'ভারত সূর্য' নামে অভিহিত করেছিলেন। তিনি ৬৩৩ হিজরি
সনে ইন্তেকাল করেন। আজমিরে তাঁর মাজার ঘিরেই উপমহাদেশের সকল ধর্ম মত
নির্বিশেষে সকলের সম্মানের স্থান, পুণ্যভুমি আজমির শরিফ।
বিখ্যাত ওলি হযরত খাজা শরফউদ্দিন চিশ্তি
(র.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আজমির হতে এদেশে আগমন করেন এবং বর্তমান হাইকোর্ট এলাকায়
অবস্থান করেন। নির্জনে বসে সাধনা করার জন্য তিনি এ জায়গাটি পছন্দ
করেছিলেন এবং এখানে বসে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগি করতেন। জনশ্রুতি ও আজমির
শরিফের ভাষ্য মতে, চিশতি’র (র.) মেঝ ছেলে। হযরত খাজা শরফউদ্দিন
চিশ্তি (র.) রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছেন।
ঢাকায় বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় জঙ্গলের
পাশে অবস্থান নেন। তার উত্তর পার্শ্বে ভীষণ জঙ্গল। এখানে বাঘ চলাচল
করত, বাঘ ও অন্যান্য
হিংস্র জন্তু বসবাস করত, তারই দক্ষিণ পাশে
জঙ্গল ঘেঁষে খাজা সাহেব একটি সরু পূর্বমুখী রাস্তার পাশে বসে আল্লাহর আরাধনা করতেন। এই সরু রাস্তা
দিয়ে লোকজন চলাচল করতেন। এই রাস্তার অদূরে একটি লোক ছিল। তার অদূরে ওয়ারি
এলাকা ছিল এবং তথায় বড় বড় বৃক্ষ ছিল এবং পশ্চিমে বৃক্ষরাজি ও কলাগাছের ঝোঁপ। লোকজন এই এলাকা
দিয়ে যাতায়াতকালে খাজা সাহেবের কাছে বসতেন এবং তার সান্নিধ্য লাভ করতে থাকেন এবং ইসলাম
গ্রহণ করেন। উপকৃত হওয়ায় খাজা সাহেবের নাম ও কেরামতি চর্তুদিকে
ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যখন তার ভক্তবৃন্দ জানতে পারলেন যে, খাজা সাহেব হযরত গরিব-ই-নেওয়াজ খাজা সাহেবের ছেলে, তিনি আজমির থেকে হযরত শাহ জালাল (র.) সাথে সিলেট
এসেছেন। ওখান থেকে দক্ষিণ অঞ্চলে খাওয়ার পথে সাময়িকভাবে
এখানে অবস্থান নিয়েছেন। এখানকার ভক্তবৃন্দের অনুরোধে খাজা সাহেব এখানে স্থায়ী
আস্তানা করতে বাধ্য হন এবং এলাকাটি চিশতিয়া এলাকা হিসেবে নামকরণ হয়।
এই এলাকার পাশ দিয়ে উত্তর দিকে একটি সরু
পায়ে হাঁটার রাস্তা ছিল। যা মগবাজার ঝিল পর্যন্ত প্রসারিত ছিল এবং দক্ষিণে
বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত। লোকজন বা খাজা সাহেবের শিষ্য বা ভক্তবৃন্দ মারা
গেলে বা ইন্তেকাল করলে তাদের এখানে দাফন করা হতো। তাই এখানে শহরের
একটি বৃহৎ কবরস্থানে পরিণত হয় এবং এর নামকরণ করা হয় ‘চিশতিয়া কবরস্থান’, যা হাইকোর্ট মাজার হতে দক্ষিণে কার্জন
হল এবং পশ্চিমে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। হযরত খাজা শরফউদ্দিন
চিশ্তি (র.)-এর ইন্তেকাল হলে তাঁর দাফনও এখানে সম্পন্ন করা হয়।
আবদুল মান্নান তালিব কর্তৃক প্রণীত ‘বাংলাদেশ ইসলাম’ নামক প্রস্তাব উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের পূর্ব পাশে হযরত খাজা শরফউদ্দিন
ওরফে খাজা চিশতি বেহেস্তির মাজার অবস্থিত। বাদশাহ আকবরের
রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫) তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আগমন করেন। এতদঞ্চলে তিনি
দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। অনেকে তাকে নওয়াব আলাউদ্দিন ইসলাম খান চিশতির উত্তর
পুরুষ বলে মনে করেন। হিজরি ৯৯৮ সালে (১৫৫৯ খ্রি.) তিনি ইত্তেকাল করেন
বলে জানা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন