সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হাইকোর্ট মাজার


হাইকোর্ট মাজার

সুলতানুল হিন্দ খাজে খাজাগান গরিব-ই-নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্তি (র.) ৫৩৬ হিজরিতে পারস্যের সিস্তান প্রদেশের সানজা নগরে জন্মগ্রহণ করেন

হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্তি (র.) ৫৬১ হিজরি সনে আজমির গিয়ে আস্তানা স্থাপন করেন এবং সেখানে একটি মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেনপ্রাচীণ পাক-ভারত উপমহাদেশে যিনি ইসলাম প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি সাধককুলের শিরোমণি ও চিশ্তিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতামুঘল সম্রাট আকবর তাঁকে আফতাব-ই-হিন্দবা 'ভারত সূর্য' নামে অভিহিত করেছিলেনতিনি ৬৩৩ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেনআজমিরে তাঁর মাজার ঘিরেই উপমহাদেশের সকল ধর্ম মত নির্বিশেষে  সকলের সম্মানের স্থান, পুণ্যভুমি আজমির শরিফ

বিখ্যাত ওলি হযরত খাজা শরফউদ্দিন চিশ্তি (র.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আজমির হতে এদেশে আগমন করেন এবং বর্তমান হাইকোর্ট এলাকায় অবস্থান করেননির্জনে বসে সাধনা করার জন্য তিনি এ জায়গাটি পছন্দ করেছিলেন এবং এখানে বসে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগি করতেনজনশ্রুতি ও আজমির শরিফের ভাষ্য মতে, চিশতির (র.) মেঝ ছেলেহযরত খাজা শরফউদ্দিন চিশ্তি (র.) রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছেন


ঢাকায় বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় জঙ্গলের পাশে অবস্থান নেনতার উত্তর পার্শ্বে ভীষণ জঙ্গলএখানে বাঘ চলাচল করত, বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র জন্তু বসবাস করত, তারই দক্ষিণ পাশে জঙ্গল ঘেঁষে খাজা সাহেব একটি সরু পূর্বমুখী রাস্তার পাশে বসে আল্লাহর আরাধনা করতেনএই সরু রাস্তা দিয়ে লোকজন চলাচল করতেনএই রাস্তার অদূরে একটি লোক ছিলতার অদূরে ওয়ারি এলাকা ছিল এবং তথায় বড় বড় বৃক্ষ ছিল এবং পশ্চিমে বৃক্ষরাজি ও কলাগাছের ঝোঁপলোকজন এই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকালে খাজা সাহেবের কাছে বসতেন এবং তার সান্নিধ্য লাভ করতে থাকেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেনউপকৃত হওয়ায় খাজা সাহেবের নাম ও কেরামতি চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকেযখন তার ভক্তবৃন্দ জানতে পারলেন যে, খাজা সাহেব হযরত গরিব-ই-নেওয়াজ খাজা সাহেবের ছেলে, তিনি আজমির থেকে হযরত শাহ জালাল (র.) সাথে সিলেট এসেছেনওখান থেকে দক্ষিণ অঞ্চলে খাওয়ার পথে সাময়িকভাবে এখানে অবস্থান নিয়েছেনএখানকার ভক্তবৃন্দের অনুরোধে খাজা সাহেব এখানে স্থায়ী আস্তানা করতে বাধ্য হন এবং এলাকাটি চিশতিয়া এলাকা হিসেবে নামকরণ হয়

এই এলাকার পাশ দিয়ে উত্তর দিকে একটি সরু পায়ে হাঁটার রাস্তা ছিলযা মগবাজার ঝিল পর্যন্ত প্রসারিত ছিল এবং দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্তলোকজন বা খাজা সাহেবের শিষ্য বা ভক্তবৃন্দ মারা গেলে বা ইন্তেকাল করলে তাদের এখানে দাফন করা হতোতাই এখানে শহরের একটি বৃহ কবরস্থানে পরিণত হয় এবং এর নামকরণ করা হয় চিশতিয়া কবরস্থান’, যা হাইকোর্ট মাজার হতে দক্ষিণে কার্জন হল এবং পশ্চিমে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলহযরত খাজা শরফউদ্দিন চিশ্তি (র.)-এর ইন্তেকাল হলে তাঁর দাফনও এখানে সম্পন্ন করা হয়

আবদুল মান্নান তালিব কর্তৃক প্রণীত বাংলাদেশ ইসলামনামক প্রস্তাব উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের পূর্ব পাশে হযরত খাজা শরফউদ্দিন ওরফে খাজা চিশতি বেহেস্তির মাজার অবস্থিতবাদশাহ আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫) তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আগমন করেনএতদঞ্চলে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম প্রচার করতে থাকেনঅনেকে তাকে নওয়াব আলাউদ্দিন ইসলাম খান চিশতির উত্তর পুরুষ বলে মনে করেনহিজরি ৯৯৮ সালে (১৫৫৯ খ্রি.) তিনি ইত্তেকাল করেন বলে জানা যায়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন