সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং নির্ভিক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান


যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং নির্ভিক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান

লিখেছেন বাবুয়া, বিকাল ০৩: ৩৩, ০৪ আগস্ট, ২০১১

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং নির্ভিক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান

দেশজুড়ে যখন "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই" মানবিক আন্দোলনে সকল দেশপ্রেমিক জনতা একাত্মতা প্রকাশ করে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখার অপেক্ষায়-ঠিক তখন একজন বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীর যুদ্ধাপরাধের বিষয় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রতিবদেন প্রকাশ করে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম বিভাগের প্রধান) নির্ভিক সাংবাদিক আবু সুফিয়ানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বানিজ উপদেস্টা সাল্মান এফ রহমান এই সকারেরই একজন হয়ে একজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষনিয়ে এই সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন! অথচ তারই মালিকানাধীন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এ সংক্রান্ত বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রচারের দায়ভার চাপানো হয়েছে সাংবাদিক আবু সুফিয়ানের ওপর।

বর্তমান সরকারের সময় যে কয়টি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন পেয়েছে-তার মধ্যে অন্যতম প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও প্রধানমন্ত্রীর বানিজ্য উপদেস্টা সালমান এফ রহমানের ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন। ভারতীয় এনডিটিভি’র কারিগরী সহায়তা ও প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণে গড়া ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন গত ২৭ জুলাই আনূষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে। উদ্বোধনী দিনে বস্তুনিষ্ঠ এবং সময়োপযোগী রিপোর্ট উপস্থাপনের জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল। প্রথম বুলেটিনে একমাত্র স্পেশাল রিপোর্ট চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধের সংশ্লিষ্ট অপরাধে বিচারাধীন একজন রাজনীতিবিদের উপর একটি বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট প্রচারিত হয়। রিপোর্টটি আবু সুফিয়ানের নির্দেশনা, পরিকল্পনা তত্বাবধানে করা হয়েছিল। রিপোর্টটিতে ভয়েস দিয়েছিলো ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে আসা অন্য এক রিপোর্টার। সেই রিপোর্টার এর পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। রিপোর্টে বলা হয়, আগামী এক মাসের মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল এর প্রধান আবদুল হান্নান এর সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। 
রিপোর্ট প্রচারিত হবার পর সকল শ্রেনীর দর্শক শ্রোতার অকুন্ঠ প্রশংসা কুড়ায়।

উল্লেখ্য যে, সালমান এফ রহমান যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর নিকট আত্মীয়। অনুষ্ঠান প্রচারিত হবার পর ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ অখুশী হন বলে জানা গেছে। রিপোর্টটি কিভাবে অন এয়ার হলো, তা খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীন তদন্ত করা হয় বলেও প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। গোপনে চলা এ তদন্ত যাতে বাইরে প্রকাশ না হয়ে পড়ে তার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করে কর্তৃপক্ষ। 

রিপোর্টটি কিভাবে প্রচার হলো, তা খতিয়ে দেখতে টেলিভিশন এর ইনপুট এবং আউটপুট ডেস্ক এর কর্তাদের সাথেও কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। কিন্তু, সবাই নিজেদের দায় এড়িয়ে গিয়ে দোষ চাপান আবু সুফিয়ান এবং তার ক্রাইম রিপোর্টারস টিম এর ওপর। 

সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের পরথেকেই আবু সুফিয়ানকে বাধ্যতামূলক ছুটি/স্বেচ্চায় চাকুরী থেকে পদত্যাগ করার সব চেস্টা চালানো হয়েছিল। সেই পদক্ষেপে গত ২রা আগস্ট এবং ৩রা আগস্ট আবু সুফিয়ানকে ডেকে পদত্যাগ করার চাপ দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শামসুর রহমান মোমেন। এমনকি তাকে হুমকিও দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্র। আবু সুফিয়ান রাজি না হলে, অবশেষে আজ ৪ঠা আগস্ট আবু সুফিয়ানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে, বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে অন্যসব কারণ দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য যে, সাংবাদিক আবু সুফিয়ান ইতিপুর্বে বেসরকারী টিভি চ্যাণেল বাংলাভিশনে থাকাকালীণ বহুল আলোচিত আর্থ ফাউন্ডেশন নামক ভুয়া এনজিও’র হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্ণীতি ও আত্মসাতের বিষয় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আলোচিত হয়েছিলেন। কারন তখন আর্থ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন নিজেকে ততকালীণ সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদ এবং বর্তমান সরকারের অনেক সহযোগী শিল্পী সাহিত্যিক, সচিব এবং বর্তমানে শাসকদলের অন্তত চারজন ক্ষমতাধর এমপি/মন্ত্রী জড়িত ছিলেন-তাদের সংশ্লিষ্ঠতার কথাও জীবনের ঝুকি নিয়ে অত্যন্ত সাহসের সাথে তুলে ধরেছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে আরো তিনজন রিপোর্টার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করেন। সেই রিপোর্টের জন্য তিনি অর্জন করেন আন্তর্জাতিক ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার। 
এছাড়াও তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মানিক মিয়া স্মৃতি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারও অর্জন করেন। 

সামহোয়্যারইন ব্লগের একঝাক তরুন ব্লগার (যাদেরমধ্যে অনেকেই এখন আমারবর্ণমালা ব্লগে জড়িত) যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে স্বোচ্চার হয়ে ব্যানার, ফেস্টুন এবং গণস্বাক্ষর সংগ্রহসহ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে সকল মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অর্জন করেছিল এবং সামহোয়্যারইনব্লগ কর্তিপক্ষ সেই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে স্থায়ীভাবে রঙিন প্রচ্ছদ ব্যানার/লোগো লাগিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহীদ আর নির্যাতিত জাতির বীর সন্তানদের সম্মানীত করেছে।

আসুন আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে স্বোচ্চার আমাদের একজন সহযোদ্ধা তরুন সাংবাদিক আবু সুফিয়ানের প্রতি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের অন্যায় নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীতে অবিচল থাকি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন