সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ শিক্ষা ও নৈতিক অবক্ষয়


বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ শিক্ষা ও নৈতিক অবক্ষয়

লিখেছেন বাবুয়া, রাত ০৮: ১৯, ০৫ অক্টাবর, ২০১১

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ শিক্ষা ও নৈতিক অবক্ষয়

শিক্ষক দিবস মানেই যদি শুধু শিক্ষকদের দিবসে সীমাবদ্ধ নারেখে সামগ্রীক শিক্ষা দিবস বলা হয়-তাহলেই দিবসটি তাতপর্য অনেকবেশী বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিয়ে নয়-আমি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু লিখতে চাই।

আজ যে শিশু;আগামীতে সে শিশুর পিতা। কবির ভাষায় বললে বলতে হয়-"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা/সব শিশুরই অন্তরে"। তাই শিশুদের অপত্য স্নেহ-মায়া-মমতায় পালন-পালন করে সবাই। প্রত্যেক মা-বাবাই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজ সন্তান কিভাবে বেড়ে উঠবে ভবিষ্যতে তার জীবন-জীবিকার মাধ্যম অর্থাৎ কোন্ পেশায় তারা প্রবেশ করবে এসব নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তার অন্ত নেই। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিভাবকগন সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে সব ধরনের ত্যাগ-তিতিক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকেন। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে,তাদের যথার্থভাবে পথ বাতলানোর উপায় আমাদের অনেকেরই জানা নেই।

কোনো দেশের ছাত্র-যুবকরাই হলো সে দেশের প্রধান শক্তি। তারা জাতির ভবিষ্যৎ ধারক-বাহক। কিন্তু দেশের ভবিষ্যত ধারক-বাহক শিক্ষার্থীরাই যদি পথভ্রষ্ট হয় এবং অসামাজিক ও ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িয়ে পড়ে তা হলে সে জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। আমাদের ছাত্রসমাজ আজ লেখাপড়ার চেয়ে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বেশি আসক্ত। তাদের অনেকেরই পরিচয় এখন বখাটে ছাত্র হিসাবে। রাস্তাঘাটে এবং মোবাইলে তারা স্কুলগামী ও কলেজগামী ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে উক্ত্যক্ত করে থাকে। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পথভ্রষ্ট ছাত্র ও যুবসমাজের হাত থেকে তাদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে সম্মিলিত সচেতন হতে হবে এখনই-বিপথগামী শিক্ষার্থীদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে এখনই।

ছাত্র যার অভিধা,অধ্যয়ন হলো তার তপস্যা। ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দরভাবে গড়তে হলে অধ্যয়নের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করাই ছাত্রসামাজের প্রধান কাজ। কিন্তু বর্তমানে ছাত্রসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। অধ্যয়নের চেয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজ এবং তথাকথিত রাজনীতির প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে আজকের ছাত্রসমাজের একটা বৃহত অংশ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একটা হাতিয়ার হয়ে পড়েছে তারা। নিয়মানুবর্তিতা,শৃঙ্খলা এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ যেখানে ছাত্রদের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেখানে তার বিপরীত চিত্রই দেখা যাচ্ছে বেশি।

পত্রিকার পাতায় আমরা প্রায়শই দেখতে পাই ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের খবর। অনেক মেধাবী ছাত্র অকালে প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিপক্ষ বা নিজ সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে।

বিগত বছর দুই ধরে ছাত্র নামধারী বখাটেদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। রাস্তাঘাটে উত্যক্তকরণ,অশালীনভাষায় প্রেমের প্রস্তাব,মোবাইলের মাধ্যমে বিরক্তি,নগ্ন ছবিসহ ম্যাসেজ প্রেরণ আজ একশ্রেণীর ছাত্রের প্রধান বিনোদন। মেয়েরা কোনো প্রতিবাদ করতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।

কিন্তু এ অবস্থা আর কতদিন চলবে?ছাত্রীদের শিক্ষাজীবনের নিরাপত্তা এবং সকল নারীর সর্বাঙ্গিন নিরাপত্তা বিধানের জন্য সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতায় শিক্ষত করে গড়েতুলতে হবে। অভিভাবকদের হতে হবে সচেতন। তাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা ও উন্নত চরিত্র গঠনের ওপর জোর দিতে হবে।

পরিশেষে আমাদের প্রত্যাশা-দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবে। সেইসঙ্গে ছাত্রীরা যাতে ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে পড়াশোনা করতে পারে এবং নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে সে নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

আরো একটি বিষয় মনে রাখতে হবে-শিক্ষার্থীদেরকে চলমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে হবে ঠিকই কিন্তু কোন অবস্থাতেই ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভুলে নয়। বরং পরিবর্তনশীল বিশ্বে উন্নত নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি বিধানমতে জীবন-যাপনের চেষ্টা করবে। সবকিছু দেখবে বা শুনবে তবে গ্রহণ করবে এমনটি যা নিজের জন্য,পরিবারের জন্য, সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। তবেই তা সবার জন্য হবে আশীর্বাদ। যদি শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা ও ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত হয় তাহলে অবশ্যই দেশ-জাতির কল্যাণ হবে। আর সে মত অবস্থায় কেবল শিক্ষার্থী,মা-বাবাই নয়; আশেপাশের সবাই-ই উপকৃত হবে। তবে কোনভাবেই মেকি আত্ম গৌরবান্বিত হবে না। মনে রাখতেহবে কেবল বাস্তব জ্ঞান ও যথাযথ মূল্যবোধের দ্বারাই জীবন যুদ্ধে কামিয়াব হতে হয়।হয়ত এপথ অনেক কঠিন-কিন্তু থেকে থাকা চলবেনা। শুরু করতে হবে নিজেকে দিয়েই। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন