সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

somewherein...... মাই লাভ, মাই প্যাশান!!!



somewherein...... মাই লাভ, মাই প্যাশান!!!

বছর চারেক পুর্বে আমি যখন খুব বেশী অসুস্থ্য তখন আমার এক বন্ধু হাসপাতালে আমাকে দেখতে গিয়ে জানালেন-সামহ্যোয়ারইন বাংলা ব্লগের কথা। যা সময় কাটাবার জন্য খুব উপযোগী। যদিও আমি আগেই সামহ্যোয়ারইন  বিশয়ে অবগত ছিলাম। আমি কর্তিপক্ষের কাছ থেকে হাসপাতাল বেডে ল্যাপ্টপ ইউজ করার অনুমতি নিয়ে নিয়মিত সামহোয়ারইন দেখি-তখন সামহোয়ারইনের বয়স মাত্র ৩/৪ মাস। সেই তখন থেকেই আমি সামহোয়ারইনের একজন নিয়মিত পাঠক। প্রথম দিকে অনেক মেধাবী লেখকদের পদচারনায় মুখরিত ছিলো এই ব্লগ। বেশীর ভাগ লেখকদের লেখা পড়ে বিমোহিত হতাম। সেই সব লেখকদের অনেকেই এখোন আর লিখেননা। অবাক হয়ে ভাবতাম-কি করে এমন সুন্দর লেখা লিখেন। আমারো ইচ্ছে করতো কিছু লিখতে-কিন্তু আমি বাংলা টাইপ মোটেই পারতামনা। আমি অনেক আগে থেকেই চট্টলা সমুদ্র গ্রুপে লিখি। ওখানে ইংলিশে লিখতে হয়। আমি ইংলিশ টাইপ পারতাম বলে আমার কোনই অসুবিধা হতোনা। আমি তখন অনেক বেশী অসুস্থ্য। অফিসে যাচ্ছিনা। হাসপাতাল, বাসায় সারাক্ষণ শুয়ে বসে সময় পার করি। পৃথিবীর যাবতীয় পঁচা ভালো ম্যাগাজিন-পত্রিকা পড়ি এবং সারাক্ষণ সামহোয়ারইনের লেখকদের লেখা পড়ি। সামহোয়ারে বিভিন্ন লেখকদের লেখা দেখে আমি লোভ সামলাতে না পেরে আমিও সামহোয়ারইনে ইংলিশ পোস্ট দিতে শুরু করি। শুরু হলো মহা ফ্যাসাদ! খালি মাইনাচ খাই! মাইনাস দাতাদের শিরমনি-আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং স্নেহাভাজন ব্লগার "চিকনমিয়া"!

তখন মিডিয়াতে একটেল মোবাইল ফোনের একটা মজার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতো-"খাইলে চাটভেন, না খাইলে পস্তাইবেন......"-জাতীয়। যেখানে বক্তব্যগুলো ইংলিশ হরপে বাংলা উচ্চারণে লেখা। অনেক ভেবে চিন্তে ঐ বিজ্ঞাপনের মতো আমিও ইংরেজী হরপে বাংলা উচ্চারণে ব্লগ লিখতে শুরু করি-সামহোয়ারইনে............ এখানেও সমস্যা! সবাই আমাকে কটুক্তি, গালাগালি করেন-এমন লেখার জন্য। ব্লগার মিল্টন, কৌশিক সহ অনেকেই আমাকে বাংলা টাইপ শিখে নিতে বললেন। আমি একটা পোস্টে লিখলাম-আমার বয়স ৪৭/৪৮ হতে চলছে-এই বয়সে আমার আর বাংলা টাইপ শেখা হবেনা! তখন জানা আপু, আমার পোস্টে মন্তব্য করলেন-"জানার/ শেখার জন্য বয়স কোন ফ্যাক্টর নয় ভাইয়া, ইচ্ছা শক্তিটাই আসল"। তিনি তার শাশুরীর ৭০ বছর বয়েসে সাক্সোফোন বাজানো শেখার কথা লিখলেন। আমি তার মন্তব্য পড়ে মুগ্ধ হলাম। চেস্টা করলাম বাংলা টাইপ শিখতে...... কিন্তু হয়না। শেখায় আমার মন নেই! আমি হতাশ হয়ে শুধু মাত্র সামহোয়ারইনের পাঠক হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক তখন প্রিয় ব্লগার মানবী আপু আমাকে "অভ্র" সফট ওয়ারের ওয়েব সাইট দিয়ে বললেন-"ওটা ডাউন লোড করে নিলেই আমি ইংলিশ লেখার স্টাইলে বাংলা লিখতে পারবো"!

আমি "অভ্র" ডাউন লোড করে নিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি কিছু কিছু লেখা লিখতে পারলাম। আনন্দে, খুশীতে আমি এতোটাই অস্থির হয়ে পড়লাম-যে আমি আমার লেখার বিশয় বস্তু ভুলে গেলাম!

আমি অভ্র'তে বাংলা টাইপ করে বিভিন্ন লেখা ব্লগে পোস্ট দিচ্ছি। বলতে গেলে সব লেখাতেই শব্দের মাঝখানে, অক্ষরের পাশে গোলাকার বৃত্ত চলে আসে-তা নিয়েও এক্সপার্ট ব্লগারদের ভালোবাসার কটু মন্তব্য সইতে হয়। যে পোস্ট ৪/৫ কিস্তিতে দিতে হয়-আমি তা এক বারেই দিয়ে দেই! অনেকেই সুন্দর উপদেশ দিয়ে আমাকে সাহায্য করেন। অন্যতম প্রিয় ব্লগার জনাব ফরহাদ উদ্দীন স্বপন আমার সাহায্যে এগিয়ে এলেন। তিনি তাঁর ই-মেইল এড্রেস দিয়ে আমার লেখাগুলো তাঁকে এটাসচড করে পাঠিয়ে দিয়ে বলেন। আমি তাই করি। তিনি সুন্দর করে লেখাগুলো সাজিয়ে দিতেন এমনকি বানান ভুল শুদ্ধ করে দিতেন। ভন্ড জ্যোতিষদের নিয়ে আমার লেখা পাঁচ পর্বের সিরিজ পুরোটাই তিনি সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছিলেন। তিনিই আমাকে শেখান-কি ভাবে লেখা সাজাবো-পোস্ট দেবার পুর্বে।

আমি প্রথম পুর্ণাংগ পোস্ট দেই আমার সিঙ্গাপুরে চিকিতসা নিয়ে। তারপর চায়না ভ্রমন নিয়ে বেশ কয়েক পর্বের সিরিজ। আমার সব লেখাতেই প্রচুর বানান ভুল হয়ে থাকে-যা পাঠকদের হতাশ করে। কিন্তু আমার বানান ভুল গুলো এতো তারাতাড়ি শোধ্রানো সম্ভব হচ্ছিলনা। ইতিমধ্যে আমার বেশ বড় একটা পাঠক শ্রেনী গড়ে উঠে-যারা ব্যাক্তিগত ভাবে আমার সাথে অত্যন্ত সু-সম্পর্ক রক্ষা করে থাকেন। তেমন একজন প্রবাসী ব্লগার "রাত"। দেশে ফিরে এক দিন আমার অফিসে চলে আসেন। খুব শান্ত, বিনয়ী সুদর্শন স্মার্ট ছেলে! আমি তাঁকে জানতে চাই-তোমার নিক "রাত" কেনো? রাত উত্তর দিলেন-ভাইয়া, আমি আসলে বাংলা টাইপ করতে পারিনা। কিন্ত সামহোয়ার ইন ছেড়েও থাক্তে পারিনা। প্রবাসে একাকীত্ত অনেকটাই ভুলে থাকি-সামহোয়ারইন নিয়ে......। আমি যখন রেজিস্ট্রেশন করছিলাম-তখন কী বোর্ড টিপতে টিপতে হঠাত "রাত" লেখাটা হয়ে যায়-যা আমি আর ডিলিট করতে পারিনি! সেই থেকেই আমি সাব্বির "রাত" হয়ে যাই!ওর কথা শুনে আমি হাঃ হাঃ পঃ গেঃ!

আমার লেখা পড়ে অনেক ব্লগার ছবি এড করে দিতে বলেন। আমি অনেক ছবি তুলি-কিন্তু ব্লগে / পোস্টে এড করতে শিখিনি। ব্লগার সাইফুর, মিল্টন, মুহিব, নিশাচর,চাঙ্কু, সজীব সহ অনেকেই আমাকে ছবি এড করার পদ্ধতি মন্তব্যে লিখে জানান। কিন্তু আমি টেকনিক্যালী এতোটাই বোকা যে-আমার দ্বারা সম্ভব হয়না। এক সময় টিপতে টিপতে ছবি এড করার পদ্ধতি শিখলাম। কিন্তু সমস্যা হলো-আমার ছবি গুলো খুব বড় সাইজের। এগুলোকে রিসাইজ করে এড করতে হবে-আমি তা পারিনা। বেশ কয়েক দিন ব্লগার তানভীর সজীব আমার অফিসে এসে হাতে ধরে শিখালেন-কি করে ছবি রিসাইজ করে এড করতে হয়। আমি এখোন মোটামুটি ছবি এড করতেও পারি! নিশাচর সেই সাভার থেকে এসে আমাকে শিখালেন-কি করে লেখার সাথে লিঙ্ক দিতে হয়!

আমি যে সবার কাছ থেকে শুধু শিখেছি তাই নয়। আমিও শিখাতে পারি। আমি ব্লগার নিশাচরকে শিখিয়েছি-কি করে লেখা/ ড্রাফট সেইভ করতে হয়!

সামহোয়ারইন এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে পাঠকরাই লেখক এবং লেখকরাই পাঠক, সমালোচক। এখানকার বেশীর ভাগ লেখক-পাঠক বয়সে খুব তরুণ,কিন্তু অনেক বেশী পড়া লেখা করে সু-শিক্ষিত এবং মেধাবী। এখানকার লেখক, পাঠকগণ শুধু লেখা এবং পড়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কার্যাবলীতে সমাহোয়ারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ সমস্ত কার্যক্রম ইতোমধ্যেই সামহোয়ারকে একটি অনন্য স্থান এনে দিয়েছে। বললে ভুল হবেনা-সামহোয়ারইন আজ একটি আন্ত রাট্রীয় পবিবার, একটি আন্ত রাস্ট্রীয় সংগঠন, সব ভেদাভেদ ভুলে একটি আত্মীক বন্ধনের নাম সামহোয়ারইন! সামহোয়ারের সংশ্লিস্টগণ, লেখক-পাঠকগণের মানবিক দৃস্টি ভংগি অন্য যেকোন সংগঠনের চাইতে অনেক অনেক বেশী এগিয়ে। তাইতো সামহোয়ারইন এগিয়ে এসেছিলো-শিশু প্রাপ্তির জন্য, রাহেলা, স্বাশ্বত, জনি, নীল আকাশের দুঃখ সহ অসখ্য অসহায় নিপিড়ীত মানুষের আত্মার আত্মীয় হয়ে!

আমি হলপ করে বলতে পারি- স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে যে আওয়াজ আজ সার্বজনিন জাতীয় স্লোগানে রুপ পেয়েছে-তার বেশীর ভাগ কৃতিত্ব এই সামহোয়ারইনের তরুণ লেখক-পাঠকগনেরর প্রাপ্য! তরুণ এবং নবীন ভোটারদের আওয়ামি লীগে ভোট দিতে সব চাইতে বেশী উতসাহি করেছে এই সামহোয়ারইনের লেখক-পাঠকগণ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছিল-শিক্ষিত, রুচিশীল এবং আধুনিক মনষ্ক মানুষগুলোই সাপ্তাহিক বিচিত্রা পড়েন। ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপে বিচিত্রা একসময় তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। সৃস্টি হয় যায়যায়দিন ক্রেজ। যায়যায়দিন হারিয়ে গিয়েছে। নবীন তারুণ্যের ক্রেজ এখন সামহোয়ারইন! সামহোয়ারইনে অনেকেই লিখেননা-কিন্তু নিয়মিত পড়েন ছেলে বুড়ো সবাই। তার প্রমানঃ-একবার আমি "ঠ্যালার ফকির মন্টু মেয়া" নামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। ব্লগার পারভীন রহমানের মন্তব্যের জবাবে এক জায়গায় উল্ল্যেখ ছিল-আমার ইয়াতীমখানায় বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে বিনে পয়সায় সার্ভিস দেয়, কিন্তু ওখানে এখনো কোন ডেন্টিস্ট নেই......। সেই লেখা পড়ে ডেন্টাল কলেজ এর অধ্যক্ষ আমার সাথে যোগাযোগ করেন- তাঁর ৪ জন সহকর্মী নিয়ে সপ্তাহে এক দিন ইয়াতীমখানায় ডেন্টাল চেকয়াপ, যাবতীয় ব্যায়ভার সহ চিকিতসা করান বিনে পয়সায়। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে ছাত্র সঙ্গগঠন এগিয়ে এসেছে-বিনে পয়সায় চিকিতসা দেবার জন্য। স্বাধীন বাংলা চিকিতসক পরিষদ, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, ড্যাব, ন্যাশনাল চক্ষু ইন্সটিটিউট, শিশু হাসপাতাল কর্তিপক্ষ এগিয়ে এসেছে এমনকি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ইউসেপ, সূরভী, ফুলকুড়ি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পাঠক এবং বেশ কয়েকটি এন জি ও আগ্রহী বিনা পয়সায় চিকিতসা, পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষা এবং অন্যান্য সহায়তা দেবার জন্য। এই সব মহতি, শিক্ষিত মহান হৃদয়বান মানুষ গুলোইতো সামহোয়ারইনের পাঠক!!!

শুধু পাঠকদের কথাই বলছি কেনো! এই ব্লগে খুব সুন্দর লিখেন আন্দালীব, হাসান মাহবুব, সুলতানা শিরিন সাজি, অন্তিম, সহেলী,  মানবী, কালপুরুষ, রুখসানা তাজীন, প্রনব আচার্য্য, পারভেজ, রাতমজুর, চিটি(হামিদা আকতার), মেহবুবা, রন্টি চৌধুরী, অমি রহমান পিয়াল, সুনীল সমুদ্র,  মাহবুব সুমন, আরিফ জেবতিক, মিল্টন, মাছরাঙ্গা, নূশেরা, প্রত্যুতপন্নমতিত্ব, রাগীব, রাগ ইমন, ফাহমিদুল হক, আইরিন সুলতানা, আশরাফ মাহমুদ, নাঈম, লীনা দিলরুবা, মৃন্ময়, প্রাকৃত, ইউনুচ খানা, অপ্সরা, একরামুল হক শামীম, নিবির সহ অনেক অনেক মেধাবী লেখকগন।আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে-এই নবীন প্রতিভাবান লেখকদের ভিতর থেকেই এক দিন বেরিয়ে আসবে নতুন কোন শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ কিম্বা সৈয়দ শামসুল হক।

জন্মের সময় মা হারা হয়ে আমার জীবনে বেঁচে থাকা থেকে শুরু করে, বয়স বাড়া, পড়া লেখা, অন্যের উপড় নির্ভরশীল নাহওয়া সব কিছুতেই আমি অনেকের কাছে অনেক অনেক ভাবে কৃতজ্ঞ।মা-বাবা, ভাই-বোনহীন আমি তাবত পৃথিবীর যাবতীয় কস্ট সয্যকরে বর্তমান সয়য় পর্যন্ত টিকে আছি। জীবনের অনেকটা সময় খুব মানবেতর ভাবে কাটিয়েছি। তাপরও টিকে আছি। আমি কারো জন্য কিছু করতে পেরেছি-তেমন বলার মত উল্ল্যেখযোগ্য অর্জন আমার নেই। অনেক প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির মাঝে সামহোয়ারইন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে-যে প্রাপ্তি শুধু অনূভবের। শুধু অন্তর দিয়ে উপলব্ধির! একটা ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম থেকে যে অনেক সুন্দর মনের বন্ধু পাওয়া যায়, সর্বোপরি লেখক-পাঠকদের কাছথেকে মা-বাবা, ভাইবোনের আদর স্নেহ পাওয়া যায়-তা আমি কোন দিন কল্পনাও করিনি। তাই সামহোয়ারইন আজ আমার প্যাশন...............

আমার স্নেহাশপদ অন্যতম প্রিয় ব্লগার সুলতানা শিরিন সাজি’র সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই-"আমাদের পারস্পারিক সন্মানবোধ, ভালোবাসা থাকলে আমরাই পারবো অনলাইনে বসেও অনেক ভালো কিছু লিখে যেতে। ভালো পাঠক পেতে।
মানুষের হৃদয় ছুঁতে হলে লেখালেখির চেয়ে ভালো বোধ আর আছে কি"?

সামহোয়ারইন সংশ্লিশঠ সকলকে ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখালেখির প্লাটফর্ম তৈরী করবার জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন