চা উপাখ্যান-১
দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে
তিব্বত যাত্রা করেন। তখন তার বয়স ৫৯ বছর। ১০৪১ খ্রিস্টাব্দে
তিনি নেপালে কাটান। মানস সরোবর থেকে তিব্বতে যাওয়ার দুটি প্রাচীন পথ
আছে। তাদের মধ্যে অতীশ
কোনটি গ্রহণ করেন তা সঠিক জানা যায় না। শ্রী শরৎচন্দ্র দাস তার
অনুবাদে অতীশের সঙ্গীসহ যাত্রীদের একটি সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন, “৩৫ জন সঙ্গী পরিবৃত হয়ে অতীশ খোলিংয়ের পথে চলেছেন। (তার বাহন) অশ্বটি
সুবর্ণ হংসের মতো মৃদুমন্দ গতিতে এই মহামুনিকে বহন করে চলেছে। অতীশের বয়স তখন
৬০ বছর। তবুও তার প্রশান্ত মুখশ্রী ও অঙ্গসৌষ্ঠব তাকে দেবদুর্লভ
মহিমামণ্ডিত করেছেন। সুস্মিতমুখে, উদাত্ত গম্ভীর
স্বরে তিনি অনর্গল সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছেন। তার সুমিষ্ট বাচনভঙ্গিতে
প্রতি বাক্যের শেষে তিনি বলছেন, ‘অতি ভালো! অতি
ভালো! অতি মঙ্গল! অতি ভালো হত্র (হয়)।”
অতীশের তিব্বতি শিষ্য ও পথসঙ্গী নাগছো
ছুলঠিম জলবা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই বর্ণনাটি দিয়েছেন। ভাষাতত্ত্বের বিচারে
দেখা যায়, ভালো বা ভালা- এই শব্দটি একাদশ শতকের বাংলাদেশে
প্রচলিত ছিল। অতীশের নিজমুখে উচ্চারিত বাক্যের এ নিদর্শন থেকে
তিনি যে বাঙালি ছিলেন এ অনুমানই স্বাভাবিক।
তিব্বতি সীমান্তে রাজপ্রতিনিধিরা অতীশকে
বিপুল সংবর্ধনা জানান। তারপর তারা চীনের ড্রাগন আঁকা একটি পাত্রে তিব্বতি
প্রথায় প্রস্তুত চা অতীশকে নিবেদন করেন। তারা বলেন, এই স্বর্গীয় পানীয় কল্পদ্রুমের নির্যাস থেকে তৈরি। অতীশ এই উচ্চ প্রশংসিত
পানীয়টির নাম জানতে চান। লোচাবা ছুলঠিম জলবা বলেন, ‘গুরুদের, এর নাম চা। তিব্বতের ভিক্ষুরাও
এটি পান করেন। অতীশ তখন মন্তব্য করেন, ‘তিব্বতের ভিক্ষুদের উন্নতশীলের গুণেই চায়ের মতো এমন চমৎকার পানীয় প্রস্তুত
হয়েছে।’ তিব্বতিরা বলেন, প্রথম চা পানের
পর অতীশ চায়ের প্রশস্তিমূলক একটি কবিতাও প্রকাশ করেন। আমার দুঃখ এই যে, সেই কবিতাটি আমি এখনো পাইনি।
অতীশের জীবনীতে চা’কে এত গুরুত্ব দেয়ার সম্ভবত অন্য কারণ আছে। তিব্বতের সম্রাট
স্রোংচান গামপো-র পৌত্র চীন থেকে এ পানীয়টি আমদানি করার পর তিব্বতে চা জাতীয় পানীয়ের
স্থান দখল করে। সম্পন্ন তিব্বতিরা দিনে ৩০ থেকে ৭০ কাপ চা পান করেন। স্বাভাবিকভাবেই
তিব্বতের মানুষ তাদের জাতীয় ধর্মগুরু অতীশকে চায়ের পরম সমঝদার রূপে চিত্রিত করেছেন। আজ পর্যন্ত আমাদের
পাওয়া তথ্যে অতীশই প্রথম বাঙালি চা পানকারী ও চা সম্পর্কিত কবিতার রচয়িতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন