মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শব্দ দূষণ, জনসচেতনতা ও করণীয়ঃ


শব্দ দূষণ, জনসচেতনতা ও করণীয়ঃ

লিখেছেন বাবুয়া, রাত ০৯: ৩২, ০৪ জুন, ২০১১

শব্দ দূষণ, জনসচেতনতা ও করণীয়ঃ

আমরা জানি শব্দ এক ধরনের শক্তি, যা কোনো মাধ্যমের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শব্দ যখন দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে, তখন তাকে শব্দ দূষণ বলে। চিকিতসা বিজ্ঞানেরমতে মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ধারন ক্ষমতা ৪৫-৫৫ ডেসিবল।কিন্তু আমরা আমাদের কানের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতার চেয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ৫০ গুণ বেশি শব্দ শুনি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যদি টানা ৮ ঘন্টা ৯০ থেকে ১০০ ডেসিবেল শব্দ প্রতিদিন শোনা হয়, তাহলে ২৫ বছরের মধ্যে শতকরা ৫০ জনের বধির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শব্দ দূষণ চোখ ও মাথার বিভিন্ন সমস্যার জন্যও দায়ী।শহরের বেশীরভাগ মানুষই মাথার যন্ত্রণায় ভোগে-যার অন্যতম কারন শব্দ দুষণ। এছাড়া ক্রমাগত শব্দ দূষণের ফলে মানুষ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক এমনকি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঢাকা শহরে যেভাবে শব্দ দূষণ বেড়ে চলেছে তাতে এ শহরের অর্ধেক মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত কমে যাবে। 

মানুষের ব্যক্তিগত অদূরদর্শী কার্যকলাপ, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপরিকল্পিত বিস্তার, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার ত্রুটি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকারের বিবর্তিত শব্দের ব্যাপকতায় শব্দ দূষণ বর্তমান সময়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় শিল্পকারখানায়, পরিবহন পদ্ধতিতে এবং সামাজিক ও ব্যক্তিগত সুনির্দিষ্ট তীব্রতা সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। বাস, ট্রেন, জাহাজ, শিল্প-কারখানা থেকে বের হওয়া শব্দ এবং ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকারের শব্দের তীব্রতা নির্দেশিত মাত্রায় বা তার নিচে বজায় রাখা উচিত। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কর্ণের শাস্তির বিধান থাকা প্রয়োজন। যানবাহন থেকে বের হওয়া শব্দের ব্যাপকতা এবং তীব্রতা হ্রাসের জন্য আইন করে উন্নত প্রযুক্তির ডিজেল ইঞ্জিন এবং এক্সসট গ্যাস পাইপে সাইলেন্সারের ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। ইদানীং যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যান্ড সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়ে থাকে। যার ফলে এ সময় অনাকাঙিক্ষতভাবে শব্দ দূষণ সৃষ্টি হয়ে আশেপাশে থাকা শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীসহ প্রায় প্রত্যেকেরই ঘুমের বিঘœ ঘটছে। পাশাপাশি পড়াশোনায়ও দারুণ ক্ষতি হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে দরকার জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। ১৯৯৭ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব জায়গায় মোটরগাড়ির হর্ণ বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ এ আইনের তোয়াক্কা কেউ করে না। এসব জায়গায় গাড়ির হর্ণ বা লাউড স্পিকারের মাধ্যমে শব্দ দূষণকারীর কঠোর শাস্তির বিধান থাকা দরকার।কারখানা বা শিল্প সংস্থায় সুর বর্জিত শব্দ উৎপন্নকারী যন্ত্রপাতি অপেক্ষা উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন এবং কম শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি দিয়ে শব্দ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এসব যন্ত্রপাতিকে শব্দ অপরিবাহী বস্র দিয়ে ঢেকে শব্দ দূষণ কমানো যায়।

আমরা প্রতিনিয়তই শব্দ দুষণের শিকার হই প্রধানত বাস/ট্রাক/লেগুণা/টেম্পো জাতীয় বড়/ছোট যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ণের মাধ্যমে।এমনকি একশ্রেনীর প্রাইভেট কার চালকদের অহেতুক, অকারন বিরামহীণ হর্ণ বাজানো একটা নেশা কিম্বা চালকদের হাম্বড়া ভাবের অনাকংখিত ঔদ্ধত্ব প্রকাশে! যার অন্যতম শিকার হয় ছোট ছোট শিশু, বয়স্ক এবং অসুস্থ্য ব্যাক্তিরা।ঢাকা সিটির সাইলেন্টস জোনেও আইনশৃংখলা বাহিনীর সামনেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাইক বাজিয়ে দেদারসে কবিরাজী/স্বপ্নে পাওয়া ঔষধ বিক্রির নামে যন্ত্রণাদায়ক অশ্লীল কথা(আকথা-কুকথা)মালায় ছন্দে ছন্দে মাইকিং করে ঔষধ বিক্রি করতে দেখা যায়-যা নিয়ন্ত্রনের কেউ নেই।একসময় ধানমন্ডি এলাকাছিল বসবাসের জন্য উত্তম স্থান।এখন ধানমন্ডি লেকস্থ্য রবীন্দ্র সরোবর, পানশী রেস্তরাসহ সর্বত্রই সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত কোনোনা কোনো অনুষ্ঠানের নামে হাই ভলিউম মিউজিক আবাসিক বাসিন্দাদের চরম যন্ত্রনার কারন হয়ে দাড়িয়েছে।শুধু ঐশ্রেনীর কান্ডজ্ঞানহীন ফুর্তিবাজদের কারনে লেক এলাকার কেউ কেউ নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বাড়ি ভাড়া করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।আমরা জাতি হিসেবেই লাউডলী কথা বলতে অভ্যস্থ্য।তার প্রমান আমরা সর্বত্রই দেখতে পাই।এর পিছনে হয়ত আমাদের শ্রবণ শক্তি নস্ট হয়ে যাওয়াই অন্যতম কারন। যারা কানে কম শোনেন-তাঁদের বদ্ধমূল ধারনা-যার সাথে কথা বলছেন-তিনিও কানে কিম শোনেন।সে কারনেই হয়ত চিতকারকরে কথা বলা আমাদের জাতিগত অভাস!

বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণকে শব্দ দূষণের অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষিত সমাজকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে। শব্দ দূষণের প্রকোপ কমাতে হলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে আমাদের প্রত্যেককে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংযমী হতে হবে। পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ করে উদ্ভিদের ঘন আবরণ সৃষ্টি করে শব্দ দূষণ রোধ করা যায়। নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে শব্দ দূষণ-বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন