মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

এসএমএস ম্যানিয়া


এসএমএস ম্যানিয়া

লিখেছেন বাবুয়া, রাত ০৯: ০০, ০৫ মে, ২০১১


এসএমএস ম্যানিয়া


সেল/মোবাইল ফোন আমার কাছে অন্যতম একটি রহস্যময় যন্ত্র! সেই রহস্যের যট খোলা আমার মত একজন "বাংলা" টাইপের মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে মোবাইল ফোনের একটি দিক নিয়ে আমার আজকের এই লেখা। সেই দিকটির নাম এস এম এস।

এমএমএস কি?
মনের আকাশে হাজারো ভাবনার আনাগোনা। কথার পিঠে কথা সাজিয়ে সেই ভাবনার গায়ে এঁকে দেই পূর্ণতার ছোঁয়া। তবে এ পূর্ণতায় হরহামেশাই অপূর্ণতার অস্তিত্ব টের পাই। মনের অব্যক্ত ভাবটি মন বাতায়ন খুলে কণ্ঠ পর্যন্ত উঁকি দিতে পারে না অনেক ক্ষেত্রেই। আর তখনই হাতের কাছে থাকা মুঠো ফোনটির ম্যাসেজ অপশনটির কাছে খুঁজে পেতে চাই এ অপারগতার সমাধান। হাজার শব্দের ফুল ঝুড়ি দিয়ে নয়, মাত্র কয়েকটি শব্দ কখনো বা কয়েকটি অক্ষর দিয়ে না বলা কথাটি মুহূর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে দেয় আজব এক যন্ত্র। আজব যন্ত্রের অভিনব এ খেলাকে বলে শর্ট ম্যাসেজ সার্ভিস বা এসএমএস।

এসএমএস এর নতুন ভার্সন হিসেবে এমএমএসও এখন বেশ জনপ্রিয়। এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া ম্যাসেজিং সার্ভিসেস "এসএমএস"র মতোই এক ধরনের ম্যাসেজিং সার্ভিস। এমএমএসের মাধ্যমে টেক্সট ম্যাসেজের সঙ্গে সাউন্ড, ইমেজ এবং ভিডিও ম্যাসেজ করা যায়। তবে শুধু মোবাইল ফোনে নয় ই-মেইলেও পাঠানো যায় এটি। এক্ষেত্রে টেক্সেটের ফরম্যাটে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ফন্ট এবং কালারস। ইমেজ সাধারনত পাঠানো হয় জেপিইজি বা জিআইএফ ফরম্যাটে। অডিওর ফরম্যাটে এমপিথ্রি বা এমআইডিআই ব্যবহৃত হয়। আর ভিডিও পাঠাতে চাইলে ব্যবহার করতে হবে এমপিইজি ফরম্যাট।

আদিম যুগে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতো আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে। অবাচনিক যোগাযোগের মাধ্যমে মনের আকুতি পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই তারা এক সময় আবিষ্কার করলো গুহার গায়ে দাগ কেটে কেটে মনের ভাব প্রকাশ করার এক অভিনব পন্থা। এ গুহা মানবরাই ধীরে ধীরে ভাষার প্রচলন ঘটান। ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লৈখিক রূপটিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম দিকে গাছের পাতা বা পশুর চামড়ার উপর লেখা-লেখির প্রচলনটি মূলত ভিন্নমাত্রা পায় কাগজ শিল্পের সহজলভ্যতার দরুন। মনের ভাবটি কাগজ আর কালির সমন্বয়ে ফুটিয়ে তোলা অর্থাৎ চিঠি লেখার ধারাটিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই সময় থেকে। প্রযুক্তির কল্যাণে চিঠি লেখার বিষয়টি কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কম্পিউটার এর স্ক্রীনে জায়গা করে নেয়। ই-মেইলের প্রচলনে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয় তথ্য। স্ক্রীনে লেখার এই পদ্ধতি আরো খানিকটা আপডেটেড হয় মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনটির উদ্ভব ও বিকাশের ফলে। ৮০'র দশকে পরিচিতি পাওয়া শর্ট ম্যাসেজ সার্ভিস বা এসএমএস গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরে ইংল্যান্ডের ৯০'র দশকের প্রথম দিকে ইংল্যান্ডের ভোডাফোন। ভোডাফোনের প্রদর্শিত এ পথ ধরেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এ সার্ভিস।

এসএমএস কালচারঃ
ধরুন, আপনি কোনো মিটিং, ক্লাশে মনোযোগী হয়ে আছেন। মোবাইলটা সাইলেন্ট করে রেখেছেন, কিন্তু ফোন অনবরত বেজেই চলেছে। এদিকে মিটিং কিম্বা ক্লাশের লেকচার না শুনে ফোনটা ধরলেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। কি আর করা চুপি চুপি ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে লিখে ফেলুন I'm in meeting /Class, call u later, দেখবেন, ফোনের জ্বালাতন সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে গেছে। কিংবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিটিং পন্ড হয়ে গেছে সহকর্মীদের জানাতে হবে, এক্ষেত্রে প্রত্যেককে বারে বারে ফোন না দিয়ে এসএমএস করে দিন Meeting is cancelled। শুধু তাই নয় বন্ধুকে কোনো কাজের জন্য উৎসাহ দেয়ার জন্য দীর্ঘ উৎসাহ বানী উচ্চারণ না করে All the best লিখে একটি এসএমএস করে দিয়ে দেখুন না বন্ধুটির কাছ থেকে কেমন সাড়া পান। কিংবা বন্ধুটির ফোন বন্ধ অথচ জরুরি দরকার। এক্ষেত্রে বন্ধুর উদ্দেশ্যে একটি এসএমএস করে দিন না। দেখবেন ফোন খোলা মাত্রাই আপনার এসএমএস পেয়ে আপনাকে স্মরণ করবে বন্ধুটি। এছাড়া বিশেষ দিবসগুলোতে প্রিয়জনদের সাথে শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবেও এখন অধিক জনপ্রিয় শর্ট ম্যাসেজ সার্ভিস। এটি ব্যবহারে আমরা এতোটাই সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠছি যে চাকরির ইন্টারভিউর সময়সূচি কিংবা অফিসের কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা পেয়ে যাচ্ছি এ সার্ভিসের কল্যাণে। এ বিষয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোতো এক ধাপ এগিয়ে। নিজেদের আপডেটেড সার্ভিসগুলো যেমন গ্রাহকদের জানিয়ে দিচ্ছে তেমনি গ্রাহকের বিলের ফিরিস্তিটাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ফলে এসএমএস এর গন্ডি শুধু বন্ধু বান্ধবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বিভিন্ন সেক্টরেই এর স্মার্ট ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। আসলে এসএমএস কালচারে এখন অভ্যস্ত আমরা সবাই। আর এ কালচারের বলয়েই আমরা প্রতিদিন এসএমএসের বহুমুখী ব্যবহারের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি।

[u]ভাষার রকম ফেরঃ[/u
এসএমএস হচ্ছে এমন একটি সার্ভিস যেখানে "স্বল্প" শব্দটি প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ কম সময়ে কম খরচে কম শব্দ ব্যয় করে মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম এটি। এ ধারাটি দিন দিন এতোটাই জনপ্রিয় ও স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠছে ফলে এ কালচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিজস্ব একটি ভাষাও। ফলে Call me লিখতে গিয়ে- Cm', 'Think positive= 'T+', 'As soon as possible= 'Asap', bye for now= b4n প্রভৃতি সংক্ষিপ্ত রূপগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের ভাষা তরুণ প্রজন্মদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও অনেকে ইংরেজি ভাষার অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগও তুলছেন। অভিযোগকারীদের মতে, ইংরেজি শব্দ নিয়ে এ ধরনের তামশা তরুণ প্রজন্মকে অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ভুল ইংরেজির সঙ্গেও পরিচিত হয়ে উঠছে তরুণরা। অভিযোগকারীদের এ অভিযোগ খন্ডাতে এসএমএসের পক্ষের লোকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তাদের ভাষ্য হচ্ছে যুগের সঙ্গে সবকিছু যখন পাল্টেছে তখন ভাষা কেন বাদ যাবে। পনেরো-বিশটি অক্ষর ব্যয় করে মনের ভাব যদি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয় তাহলে সমস্যা কোথায়। বরং দশ-পনেরোটি শব্দ লিখে সময় নষ্ট করার চেয়ে অক্ষর ব্যবহার করে কৌশলে মনের কথাটি বোঝাতে পারাটাই তো স্মার্টনেসের লক্ষণ। শুধু কি ইংরেজি, আজকাল বাংলাতেও এসএমএস করার সুযোগ ঘটছে আমাদের।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন