সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

পণ্যের প্রসারে বিজ্ঞাপনঃ


পণ্যের প্রসারে বিজ্ঞাপন

গত আগস্ট মাসে ব্যবসায়ীক কাজে দেশের বাইরে যাই। হংকং থেকে অনেকগুলো ম্যাগাজিন কিনি। তারমধ্যে একটা ম্যাগাজিন ছিল-"এডবিজ"। হংকং থেকে প্রকাশিত এই এডবিজ ম্যাগাজিনে ওয়ার্ল্ড এডমার্কেটিং/মডেলিং সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর থাকে। জুন, ২০১০ সংখ্যা বাংলাদেশের এড মার্কেটিং নিয়ে একটা ফিচার ছিল। তারমধ্যে উল্যেখযোগ্য খবর ছিল বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কোম্পানীগুর বিজ্ঞাপনী ব্যয় সংক্রান্ত।ঐ পত্রিকার তথ্য সুত্রে দেখতে পাই-বাংলাদেশে বেসরকারী সেল ফোন কোম্পানীগুলো বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় করে যথাক্রমে গ্রামীন-২২%, বাংলা লিংক-১২%, রবি(একটেল)-১২%, ওয়ারিদ-১০%, সিটিসেল-৪% এবং টেলিটক-১.১০%। এই একই খাতে আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতে গড় ব্যয় হয়-৫ পার্সেন্ট। পাকিস্তানে ২%, চায়নায় ২%, শ্রীলংকা-১.২০%।

আমি পড়া লেখা করেছিলাম পাবলিক এডমিনশট্রেশন এবং উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছিলাম বিজনেস এডমিনেস্ট্রেশন এন্ড বিজনেস ডেভলেপমেন্ট বিষয়ে।বিজনেস ডেভলপমেন্টে পন্যের বাজারজাত প্রসংগে পড়েছিলাম-যে কোনো পন্যের সকল প্রকার বিজ্ঞাপনে সর্বচ্চ প্রডাক্ট মুল্যের ২% ব্যয় করা যেতে পারে। ইন্টার্ণী শিপ করার সময় সিমেন্স, গোডিভা, মিতসুমারু'র মত বিশ্বখ্যাত কয়েকটি কোম্পানীতে কাজ করে এবং পুর্বাপর পেশাগত কারনে দেখতে পাই-ওয়ার্ল্ড ওয়াইড যেকোনো পন্যের বিজ্ঞাপনে সর্বচ্চ ২%-ই ব্যয় করা হয়।কিন্তু বাংলাদেশেই বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এই নিয়মের ব্যতিক্রম।আমরা যখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করি-সেখানেও বিজ্ঞাপন খাতের এই ব্যয় দেখানো হয়-যা আয়কর বিভাগ মেনে নেয়।

বাংলাদেশে পন্যের প্রসারের প্রচারে এই যে আকাশ্চুম্বী ব্যয়-এই ব্যয় নিশ্চই কোম্পানীর মুলধন নস্ট করে করা হয়না। ব্যয়/খরচটা সম্পুর্ণই কাস্টমারদের পকেট থেকে তুলে নেয়া হয়।যার কারনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়-ভোক্তাগণ। বেশীর ভাগ সময়ই পণ্যের বাজারজাত করণ প্রক্রিয়ায় বেশী খরচ সামাল দিতে পণ্যের গুণগত মানের সাথে আপোশ করতে হয়।সেক্ষেত্রেও ক্রেতারা বেশী মুল্য দিয়েও গুণগত/মানসম্পন্ন পণ্য পাচ্ছেনা।

যে কোনো পণ্যের প্রসারলাভে প্রচার তথা বিজ্ঞাপনের অপরিহার্যতা রয়েছে বটে কিন্তু ভোক্তা সাধারণের কাছে সেই পণ্যের গ্রহণযোগ্যতার জন্য বিজ্ঞাপনই যথার্থ নয়সত্যিকার অর্থে কোনো পণ্য গুণাগুণ সমৃদ্ধ কিনা, তা পরখ করে সন্তুস্ট হতে পারলেই কেবল সংশ্লিষ্ট পণ্যটির সমঝদার হইকিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের তথা ভোক্তা মহলের এহেন বিশ্বাসকে পুঁজি করে একশ্রেণীর পণ্যমালিক প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেনতারা নতুন উপাদিত পণ্যের গুণগতমান ঠিকই উন্নত করেন তবে তা শুধু মাত্র সাময়িক বাজারজাত করার স্বার্থেকিন্তু যখন পণ্যটির ব্যাপক প্রসার ঘটে, তখন ব্যবসায়িক কূটকৌশল তাদের পেয়ে বসেপণ্যটির মান আর আগের মতো থাকে না

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাণিজ্যিক ধ্যান-ধারণাকে আর গতানুগতিক গণ্ডিতে রাখা যাবে নাপণ্য প্রসারের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে ভোক্তা সাধারণের সন্তুষ্টি অর্জন।। এ ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করা আজ সময়ের দাবিমি মনে করি, কোনো কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেইএ টাকার অর্ধেক দিয়েও অব্যাহতভাবে গুণমান সমৃদ্ধ পণ্য নিশ্চিত করা যায়উল্লেখ্য, এদেশে চা প্রচলনের সময় কোনো মিডিয়ার বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন হয়নি, কেবল চা-এর স্বাদ গ্রহণের সুযোগ ভোক্তাদের বিনামূল্যে দেয়া হয়েছিলএভাবে কোনো পণ্য নতুন উপাদন করে বিনামূল্যে এ নমুনা যদি গণমানুষের একটি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যেও সরবরাহ করা যায, তাহলে বিজ্ঞাপন প্রকাশ বা প্রচারের চেয়ে তা আরো কার্যকর হবেভোক্তাগণ এক্ষেত্রে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনপৃথিবীর বহু দেশের পণ্যের প্রসারের জন্য মিডিয়ার বিজ্ঞাপনের চেয়ে ভোক্তার সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানতে কর্তৃপক্ষ এভাবে তাদের মধ্যে বিনামূল্যে পণ্য সরবরাহ করে থাকেন

এখন প্রশ্ন হচ্ছে-শুধু বাংলাদেশেই কেনো মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো এমন অঢেল ব্যয় করছে। কারন, আমারা চাকচিক্য, রং-বেরং পছন্দ করি।আমরাই কোয়ালিটির চাইতে কোয়ানটিটি লাইক করি, আমরাই অনুতপাদনশীল খাতে বেহিসেবী খরচ করি।অপর দিকে মোবাইল কোম্পানীগুলো বেশুমার ব্যয় করেই বেশুমার উপার্জন করে কোনো প্রকার জবাব্দিহিতা ছারাই, বিনা বাধায়, বিনা প্রশ্নে প্রতি দিন, মাস কোটি কোটি টাকা পাচার করে নিজ নিজ দেশে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।কাজেই বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগনের পকেট কেটে উজার করে দিলেও এই দেশে কেউ জবাব্দিহিতার সম্মুখীন হবেনা-সেই সুযোগ মোবাইল কোম্পানীগুলো নিচ্ছে।

বিজ্ঞাপনের জন্য অঢেল অর্থ ব্যয় করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বা গুণগত মান নিম্নমুখি না করে বরং সব সময় পণ্যের উন্নত মান অক্ষুণœ রাখলেই বাণিজ্যিক সূত্রমতে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভবএই উপলব্ধিটি আমলে এনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পণ্যমালিকদের যেমন সুনাম বজায় থাকে তেমনি ক্রেতাদেরও সন্তুস্টি অর্জন সম্ভব। এবিষয়ে যদি আমরা বিশাল সাধারন ক্রেতা/ব্যবহারকারী সচেতণ হতে পারি-তাহলে আমরাই লাভবান হতে পারি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন