সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সুকৃতি বিশ্বাসের কুকীর্তি এবং বিশ্বাস ভংগ!


সুকৃতি বিশ্বাসের কুকীর্তি এবং বিশ্বাস ভংগ!

লিখেছেন বাবুয়া, রাত ০৯: ০৩, ০৮ অক্টাবর, ২০১১

সুকৃতি বিশ্বাসের কুকীর্তি এবং বিশ্বাস ভংগ! 

আমার একটি শিল্প কারখানায় স্থানীয় কাঁচামাল সরবরাহকারী ডিলারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য আমি গত চার মাসে বাংলাদেশের সব জেলা শহর এবং কয়েকটি উপজেলাও ভিজিট করেছি।খুলনা-যশোর জেলা ভিজিট করার সময় ক্ষমতাসীন দলের এমপি খান টিপু সুলতান সাহেবের শ্যালকের সাথে ব্যবসায়ীক বন্ধুত্বের সুবাদে(সদ্য প্রতিষ্ঠীত একটি টেক্সটাইল মিল মালিক) পুর্ব পরিকল্পনামত মনিরামপুর উপজেলায় ১ দিনের জন্য বেড়াতে হয়েছিল। সেখানে থাকা কালীন দূর্ণীতির এক পেল্লায় কান্ড মীমাংশা নাটক স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।

মনিরামপুর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি সুকৃতি বিশ্বাস কুলটিয়া গার্লস স্কুল ও পোড়াভাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি এবং মশিহাটি ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য। গত বছর ওই কলেজের সংস্কার বাবদ সরকারের ত্রাণ বিভাগ থেকে দেওয়া সাড়ে চার লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ প্রকল্প কমিটির সভাপতি হিসেবে সুকৃতি বিশ্বাস তুললেও কলেজের তহবিলে জমা দেননি। পরে এ নিয়ে কলেজে সালিস হলে সাংসদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সুকৃতি বিশ্বাস এক লাখ ১০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হলেও বাকি টাকা এখনো দেননি।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক এবং সাধারন মানুষ আন্দোলন করছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে সুকৃতি বিশ্বাস বলেন,‘কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এমপি সাহেব বিষয়টির মীমাংসা করে দিয়েছেন। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।’-অর্থাৎ সুকৃতির কুকৃতি এখন পুতপবিত্র স্বীকৃতি পেয়েছে!

সুকৃতি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর আরো অনেক অবিশ্বাসের সুস্পস্ট অভিযোগ। যেমন-গত বছর মনিরামপুরে ৫৪ জন সার ডিলার নিয়োগ হয়।এ ক্ষেত্রে ডিলারপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা/ঘুষ নেওয়ার দায়িত্ব ছিল শ্রীমান সুকৃতি বিশ্বাসের ওপর। তিনি জানান, এই টাকা তিনি মনিরামপুর বহুমুখী উন্নয়ন সমিতির তহবিলে জমা রেখেছেন। এই সংগঠনের সভাপতিও সুকৃতি বিশ্বাস।
এই অভিযোগ প্রসংগে শ্রীমান কৃতিমান সুকৃতি বলেন,‘আওয়ামী লীগের সমর্থক কৃষকদের উন্নয়নে এই সংগঠন গঠন করা হয়েছে। এমপি সাহেব ডিলারদের কাছ থেকে এই টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সমিতির ৪০০ সদস্যের সবাই আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁদের প্রত্যেককে কৃষিকাজের জন্য দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে-এটা কোনো দোষের নয়!’

সাংসদ খান টিপু সুলতান এ ব্যাপারে বলেন,‘সরকার আওয়ামী লীগের, ডিলারও আওয়ামী লীগের, কৃষকেরাও আওয়ামী লীগের, জনগনও আওয়ামী লীগের- ফলে ডিলাররা যদি কৃষকের উন্নতির জন্য চাঁদা দেয়, তাহলে আমিতো দোষের কিছু দেখছি না।’

স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকেরা-এই চুরি/লুটপাটের দায়িত্ব স্থানীয় আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, মনিরামপুরে যেকোনো উন্নয়ন বরাদ্দ, নিয়োগ ও দরপত্র নিয়ন্ত্রণে সাংসদ টিপু সুলতান তাঁর ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এঁরা হলেন অরবিন্দ হাজরা, দেবাশীষ সরকার, জি এম মজিদ, গৌর কুমার, উত্তম মিত্র ও জয়ন্ত বসু। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে একজন করে সংগ্রহকারী রয়েছেন। এই সংগ্রহকারীরা বরাদ্দ ও নিয়োগ থেকে পাওয়া টাকা থেকে নিজেদের কমিশন রেখে বাকি টাকা এই ছয়জনকে দেন। ওই ছয়জনের হাত হয়ে তা সাংসদ পর্যন্ত পৌঁছায়।

এবিষয়ে সাংসদ বলেন, ‘আমার বাবা জমিদার ছিলেন। আমার স্ত্রী চিকিৎসক। মাসে আমাদের কয়েক লাখ টাকা আয়। আমি কেন মানুষের টাকা নেব!’

উন্নয়নের নামে সীমাহিন দুর্নীতি, লুটপাট,জনপ্রতিনিধিদের মূল্যবোধের চর্চার বিনাশ এবং জনগণের একটা বড় অংশ দেশের আপন সংস্কৃতির ঐতিহ্য ভুলে বসা সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে আরো দুর্বল করে ফেলেছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের নৃশংসতা, মিথ্যাচার, স্বেচ্ছাচার, হামলা-মামলা।

(মীমাংশার পরেও বিষয়টা সাংবাদিকেরা ২৯/৮/২০১১ইং তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ প্রকাশ করেন, কিন্তু স্থানীয় চাপের মধ্যে থাকা মফস্বল সাংবাদিক এখন নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন।কিছু কিছু তথ্য সূত্র-প্রথম আলো)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন