সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

পুরানো ঢাকার বিরিয়ানি বাজার


পুরানো ঢাকার বিরিয়ানি বাজার
পুরাতন ঢাকার আলাউদ্দিন রোড দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় প্রায়শই একটি ব্যাপার সবার চোখে পড়েআর সেটা হলো রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট দোকানগুলোযে দোকানগুলোতে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকেআর ভিড়ের কারণ জানার জন্য ভিড় ঠেলে সামনে যাবার প্রয়োজন নেইকেননা দোকানগুলোর আশেপাশে দিয়ে হেঁটে গেলেই পঞ্চ ইন্দ্রিয় জানান দেবে সুগন্ধি  সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণআর সেই "ঘ্রাণ" পুরাতন ঢাকার অনেক মুখরোচক খাবারের একটি বৈশিস্টআর বৈশিস্টের বৈশিস্ট হলো- পুরানো ঢাকার বিরিয়ানিপুরানো ঢাকার মানুষের হাজারো খাবার তালিকায় নিঃসন্দেহে বিরিয়ানি জিনিসটি প্রথম সারিতেই রয়েছে
পুরান ঢাকার খাবার তালিকায় বিরিয়ানি হবার অনেক কারণও রয়েছেমোঘল আমলে পাকুড়তলী ছিল যেমন পুরনো ও নতুন ঢাকার সীমানা, ফুলবাড়িয়া তেমনি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন ও পুরনো ঢাকার সীমানাউনিশ শতকের মাঝামাঝি ঢাকা শহরের সবচেয়ে দামি এলাকা ছিল পুরাতন ঢাকার  গেয়ান্ডারিয়া, ওয়ারী, নাজিরা বাজার, লাল্বাগ সহ বিভিন্ন এলাকাআর এখানে বসবাস করতো ভারতবর্ষের নানা স্থানের লোকজনতেমনি ছিল মোঘলরাতাদের বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের প্রতি ছিল দুর্বলতাঅনেকটা সেখান থেকেই পুরাতন ঢাকার মানুষদের মুখরোচক খাবারের প্রতি রয়েছে আকর্ষণআর বিরিয়ানি তাদের মধ্যে অন্যতমসেই ঐতিহ্য পুরানো ঢাকাবাসী আজও ধরে রেখেছেকারণ যত দিন যাচ্ছে এলাকাগুলোতে বিরিয়ানির দোকান দিয়ে ছেঁয়ে যাচ্ছেতবে দীর্ঘদিন ধরে যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য "হাজী বিরিয়ানি"আলাউদ্দিন রোডে দীর্ঘ  ৭০ বছর ধরে হাজী বিরিয়ানি অত্যন্ত সুনামের সাথেই ব্যবসা করে চলছে১৯৩৯ সালে হাজী গোলাম হোসেন প্রথম হাজী বিরিয়ানি দোকানটি শুরু করলেও বর্তমানে ব্যবসার পুরো দেখভাল করছেন তার নাতি হাজী মোহাম্মদ সাহেদহাজীর বিরিয়ানির স্পেশালিটি হচ্ছে-ওরা বিরিয়ানী রান্নায় ঘি/বাটার অয়েল এর পরিবর্তে শুধু সরিসার তেল ব্যবহার করেএই দোকান/হোটেলের কোনো সাইন বোর্ড নেই-কিন্তু এক নামেই সকলে চেনেবর্তমানে হাজী বিরিয়ানির প্রতি প্লেট ৭০ টাকাসকাল ৭ টা থেকে সকাল ৯ টা এবং  সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত সাড়ে নয় টা এই দুই সময়ই বিরিয়ানি পাওয়া যাবেতবে যত চাহিদাই থাকুক-সকালে ২ ডেকচি ও বিকেলে ৩ ডেকচির বেশি বিক্রি করা হয় নাতবে ইদানীং কালে এখান থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে মতিঝিল এবং গুলশানে দুটি ব্রাঞ্চ পরিচালিত হচ্ছে-যা শুধু দুপুড়েই পাওয়া যায়আলাউদ্দিন রোডের মেইন দোকান থেকে বিরিয়ানি কিনে বাসায় নিতে চাইলে তা নিতে হবে ওদের বানানো "কাঠাল পাতার" পার্সেল প্যাকেট করেদীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে চলছে বলে এ দোকানের অধিকাংশ ক্রেতাই অনেক পুরানোহাজী বিরিয়ানি হাউসের বর্তমান মালিক মোহাম্মদ সাহেদ জানালেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্ডার নেয়া হয় তবে সেই ক্ষেত্রে ২/১ দিন আগে জানাতে হয়

হাজী বিরিয়ানির পাশেই রয়েছে হানিফের বিরিয়ানিএ বিরিয়ানি হাউজটিও বেশ পরিচিত পেয়েছেআমার পরিচিত প্লেইন সিট ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান ওমরতিনি সপ্তাহে প্রায় দিনই দুপুরের খাবারটি এখান থেকেই সেরে নেনপ্রতি প্লেট ৭০ টাকা হলেও খাবারের মান অনেক ভালঅন্যদিকে আলাউদ্দিন রোডেরই বিউটি বিরিয়ানি হাউজ  ওমরের ছোট ভাই ব্যবসায়ী আলীর পছন্দের তালিকায় প্রথমআর সে কারণে প্রায়ই কাজের ফাঁকে ৫০ টাকার কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে চলে আসেন এখানে
এছাড়াও আলাউদ্দিন রোডে রয়েছে ভাই ভাই বিরিয়ানি হাউজ, মামুন বিরিয়ানি হাউজ, মক্কা-মদিনা বিরিয়ানি হাউজ, বিসমিল্লাহ বিরিয়ানি হাউজএখানে প্রতি প্লেট রাখা হয় ৩০ টাকা করেএখানে এখন আরও নতুন নতুন কিছু বিরিয়ানি হাউজ রয়েছেসেখানে প্রতি প্লেট ৩০/৪০ টাকায় প্রায় সারাদিনই পাওয়া যায়এছাড়াও পুরাতন ঢাকার জিন্দাবাহার এলাকায় করিম মিয়ার মোরগ পোলাও প্রতি প্লেট ৫০ টাকানারিন্দার ঝুনু মিয়ার কাচ্চি বিরিয়ানি ৫০ টাকা, মালিটোলার ভুলু বিরিয়ানি প্রতি প্লেট ৩০ টাকা, সুরিটোলায় রহিম বিরিয়ানি ২৫ টাকা, নয়াবাজারে খালেক বিরিয়ানি ২৫/৩০ টাকা প্লেটদীর্ঘ ২৬ বছর ধরে একই জায়গায় ও এক দামে বিক্রি করায় অনেকেরই পছন্দের তালিকায় খালেকের বিরিয়ানিতাছাড়াও কলতা বাজারের মোল্লা বিরিয়ানি ২৫ টাকানারিন্দা রয়েল কাচ্চি বিরিয়ানি ৫০ টাকানবাবপুরের ষ্টার হোটেলে কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে পারেন ৭০ টাকা প্লেট
লালবাগ কেল্লার মোড় কাছাকাছি আছে আরো একটি ঐতিহ্যবাহি বিরিয়ানির দোকান-যার নাম "নান্না মিয়ার বিরিয়ানি"! এই দোকানের বিরিয়ানি আসলেই খুব মজাআমার ছোট ছেলে পারলে প্রতিদিনই ঐ নান্নার বিরিয়ানী খেতো-যদি দোকানটি বাসার নিকট হতো কিম্বা যাতায়তের সুব্যবস্থা থাকতো!  নান্নার বিরিয়ানি একটা জনপ্রিয় র‌্যাপ গানের মধ্যেও উল্যেখ আছে
পুরানো ঢাকার আর এক বিখ্যাত/জনপ্রিয় হোটেলের নাম ষ্টার হোটেলএখানে অবশ্য সব ধরনের খাবারই বিক্রি হয়কিন্তু  ষ্টার হোটেলের অনেক খাবারের মধ্যে এখানকার কাচ্চি বিরিয়ানি চাহিদা এলাকার লোকজনের মধ্যে খুব বেশিএখানে কাচ্চি বিরিয়ানি প্রতি প্লেট ৭০ টাকা
এছাড়াও নর্থ সাউথ রোডে আল রাজ্জাক হোটেলের কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে পারেন ৭০ টাকা প্লেট
এসব বিরিয়ানি হাউজ ছাড়াও ইসলামপুর, চকবাজারে বেশ কয়েকটি অভিজাত বিরিয়ানির দোকান রয়েছেমোদ্দাকথা, সমস্ত পুরাতন ঢাকায় প্রচুর বিরিয়ানির দোকান রয়েছে যেখান থেকে খুব কম দামে সুস্বাদু মুখরোচক খাবার বিরিয়ানি আপনি খেতে পারেন

৪টি মন্তব্য:

  1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. পুরান ঢাকার ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে যারাই লেখালেখি করেন তারা সুকৌশলে একটি বিষয় এড়িয়ে যান আর তা হলো আদি ঢাকাইয়াদের কথা। এর কারণ লেখকগণ অধিকাংশই গ্রাম থেকে আসা বা আদি ঢাকার বাসিন্দা নন। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য আর খাবারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্যে আদি ঢাকাইয়াদের সর্ব প্রথম নাম আসার কথা কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা ঢাকাইয়া শব্দটি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যান। মানুষ লেখাপড়া জানলেই যে ভালোমানুষ হওয়া যায় না গ্রামের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষগুলোর এহেন হীনমন্যতা তারই দৃষ্টান্ত। কোনো গ্রামের ইতিহাস লিখতে গেলে কি সেই গ্রামের মানুষদের কথা বাদ দিয়ে লিখা যাবে? আদি ঢাকায় যত ধরনের মানুষই থাক আদি ঢাকাইয়াদের অবদান এড়িয়ে যাওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হাজির বিরিয়ানির কথা বলা হলো কিন্তু সেই হাজী সাহেব যে আদি ঢাকাইয়া সেটি কিন্তু একবারেও বলা হলো না, ভাবখানা এমন যে উনি কুমিল্লা না ফরিদপুর থেকে এসে বিরিয়ানির দোকান দিয়েছিলেন। লেখকগণ ভুলে যান যে এই ৪০০ বছরের ঢাকায় ৪ পুরুষ ধরে কিছু মানুষ বসবাস করেন আর এরাই আদিবাসী। আমাদের ঢাকাইয়া বললে কি নিজেদের বিদেশী লাগে? ১০০ বছর থাকলেও কি কেউ নিজের দেশকে অস্বিকার করা উচিত আর বাবার আদি বাড়ি মুছে ফেলা যাবে??

    উত্তরমুছুন