সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

চা উপাখ্যান-২


চা উপাখ্যান-২ 

চা-কে কেন্দ্র করে চীনে একটি জনপ্রয়ি উপাখ্যান প্রচলিত আছেতা হলো এই, ‘৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত বৌদ্ধ র্ধম সাধক বোধিসত্ত্বের মৃত্যু হয়বোধিসত্ত্ব হলেন পরোপকারী এবং জ্ঞানের সাধকপ্রায় সময় তিনি ধ্যান করতেনধ্যানে বসে একবার তার এতই ঘুম পাচ্ছিল যে, ধ্যানে একাগ্রতা আসছিল নাতখন তিনি হঠা খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে দুচোখের পাতা কেটে মাটিতে ফেলে দেনমাটিতে পড়া চোখের পাতা থেকে গাছ জন্মেএকদিন বোধিসত্ত্ব ওই গাছের কিছু পাতা খেয়ে নেনএতে তার ঘুম দূর হয়ে যায়, ধ্যানের সহায়ক হয়এ কথা তিনি বুঝতে পারলেনতখন তিনি ওই গাছের গুণ ও খাওয়ার কথা শিষ্যদের বলেনএ গাছই চা

চা সম্পর্কে দ্বিতীয় উপাখ্যানটিও চীনেরচিনের এক রাজা গভীর অরণ্যে শিকার করতে গিয়ে চা পাতা আবিষ্কার করেন আকস্মিকভাবেরাজা তার পাত্র-মিত্র নিয়ে গেলেন শিকারেদীর্ঘ পথ ঘুরে ঘোড়ায় চড়ে চলতে চলতে তিনি খুব কান্ত হয়ে পড়লেনঅরণ্যের এক জায়গায় বিশ্রাম নিতে তাঁবু খাটাতে বললেনরাজার নিয়মিত অভ্যাস, গরম পানি পান করেন তিনিরাজার রসুইখানার মালিক গরম পানি করে রাজাকে পরিবেশন করলেনরাজা সেই গরম পানিতে পেলেন এক ভিন্ন রকম স্বাদপানিও ছিল সামান্য রঙিনকান্তিও একটু দ্রুত কেটে গেল মনে হলোব্যস, এর কারণ খুঁজে রাজা দেখেন, পানি সেদ্ধ করার পাত্রে একটি পাতা পড়ে আছেওই পাতার কারণেই পানির স্বাদ ও রঙে ভিন্নতা আসেআবার খোঁজ, কী গাছের পাতা, কোথায় সেই গাছখোঁজাখুঁজির পর সন্ধান পাওয়া গেলপরীক্ষা চললসমাধানও মিললওই পাতার রসে দেহের কান্তি কাটেতাই সে তন্দ্রাহরণীসবুজ পাতা থেকে রস বের করতে হয় বলে সে শ্যামপর্ণী

চৈনিক ইতিহাসমতে চীনা দার্শনিক জগদ্বিখ্যাত কনফুশিয়াসের সময় খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ শতাব্দীতে চা ব্যপক ভাবে ব্যবহার শুরু হয়৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চীনে চায়ের ওপর কর আরোপ করা হয়নবম শতাব্দীতে চীন থেকে চা জাপানে পৌঁছলেও জাপানিজরা ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে এর চাষ শুরু করেনচীনারা দাবি করেন, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ বছর আগে সম্রাট সিন নাং চায়ের প্রচলন করেন

১৬০০ শতাব্দীতে চা ডাচদের মাধ্যমে ইউরোপ যায়যদিও এই সম্পর্কে আবার মতভেদ আছেতবে ১৭০০ শতাব্দীতে চা ইংল্যান্ডে পৌঁছায়লন্ডনে ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম চায়ের দোকান হয়১৬৬৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখনকার ব্রিটিশ সম্রাট দ্বিতীয় চার্লসকে ২ পাউন্ড ২ আউন্স চা উপহার দেনসেকালে ওই চায়ের দাম ছিল প্রতি পাউন্ড ৪০ শিলিং১৬৭৭ সালে কোম্পানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চীন থেকে চা রফতানি করতে থাকেতখন চায়ের জন্য সম্পূর্ণরূপে চীনের ওপর নির্ভর করে থাকতে হতো

জানা যায়, চীনেই চায়ের ব্যবহার প্রথম হয়েছেচা প্রথম ব্যবহৃত হয় ওষুধ হিসেবে, তারপর পানীয় হিসেবে- সারা বিশ্বে প্রবল প্রতাপে ছড়িয়ে পড়ে। 


চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া চিনেনসিসচা অতন্ত্রী, তন্দ্রাহরণীচায়ের মধ্যে এমন স্পেশাল ঘ্রাণ আছে-যার সাথে অন্য কোনো প্রাকৃতিক ঘ্রাণের মিল নেইসেই ঘ্রাণকে প্রাকৃতিশ্রেষ্ঠ ঘ্রান হিসেবে উল্যেখ করছেনে বৈজ্ঞানিকগনচা প্রাকৃতিক ঘ্রাণে শ্রেষ্ঠ বলে চা-কে ঘ্রাণসম্রাজ্ঞী হিসেবে র্বণনা করা হয়েছে চীনা ইতিহাচা বর্তমান বিশ্বের এক নাম্বার জনপ্রিয় পানীয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন